চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে সেনাসদস্য ও সাংবাদিককে মারধর এবং লাঞ্ছনার ঘটনায় তিন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তাদের ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আটক করা হয়। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত ইয়াসিন আরাফাতকে আটকের চেষ্টা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে ৫টি মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে র্যাব।
আটকরা হলেন- আরএনবির সিপাহী মাইন হাসান রাকিব, লিটন চাকমা ও হাবিলদার মো. রবিউল ইসলাম।
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) বেলা ১১টায় চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ এসব তথ্য জানান।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র্যাব অধিনায়ক বলেন, মেইল ট্রেনে টিকিট দেওয়া হয়, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো আসন থাকে না। মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার সেনাসদস্য মেইল ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার উদ্দেশে গত ৮ আগস্ট রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত হন। টিকিট কেটে প্লাটফর্মে থাকা ঢাকাগামী মেইল ট্রেনে উঠতে যাচ্ছিলেন তিনি। তখন ডিউটিতে থাকা কয়েকজন আরএনবির সদস্য তাকে বাধা দেন। তারা বলেন, এই বগির সব সিট বুক করা। এখানে বসা যাবে না। আরেকটি বগিতে গেলে সেখানেও তিনি বাধাপ্রাপ্ত হন। তিনি দেখতে পান, আরেকটি বগি কয়েকজন মানুষ উঠছে। আরএনবির কয়েকজন সদস্য ওই যাত্রীদের ট্রেনে তুলছেন।
তখন সেনাসদস্য ওই লাইনে গিয়ে দাঁড়ান। তিনি বগিতে উঠতে গেলে আরএনবির এক সদস্য তাকে আটকে দেন। সেনাসদস্য টিকিট দেখানোর পরও আরএনবি সদস্যরা তার কাছ থেকে আরও ১৫০ টাকা দাবি করেন। তারা বলেন, ‘এটাই নিয়ম। এটা আমাদের বুক করা। এটাতে যেতে হলে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে যেতে হবে।’
তখন সেনাসদস্য বিষয়টির প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে আরএনবি সদস্যদের অনৈতিক কাজের দৃশ্য ভিডিও করার চেষ্টা করেন। এসময় সিপাহি রাকিব ওই সেনাসদস্যের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। একইসঙ্গে লিটন চাকমা, ইয়াসিন সেনাসদস্যের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্য বলে নিজের পরিচয় দেন তিনি। এতে আরএনবি সদস্যরা আরো চড়াও হন। তারা সেনাসদস্যকে গালাগালি, মারধর, রাইফেল দিয়ে ধাক্কাসহ বাহিনীকে নিয়েও ব্যাপক গালমন্দ করেন।
এম এ ইউসুফ বলেন, এসময় সেখানে উপস্থিত একটি অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিক ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করেন। তাকেও আরএনবি সদস্যরা লাঞ্ছিত করে। মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে সেনাসদস্য রেলওয়ে আরএনবি ইন্সপেক্টরের কাছে অভিযোগ করেন। তখন ইন্সপেক্টর আরএনবি সদস্যদের ডেকে আনেন। সেখানেও আরএনবি সদস্যরা মিথ্যা কথা বলেন। একপর্যায়ে তারা ভুল স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, সিপাহি রাকিবই মূলত আক্রমণ ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে। তাকে ঢাকা থেকে আটক করা হয়েছে। আর হাবিলদার রবিউল ও লিটন চাকমাকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইয়াসিন নজরদারির মধ্যে রয়েছে। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, তাদের বিরুদ্ধে রেলওয়ে থানায় পাঁচটি মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথম মামলাটি হবে ঘুষ নেওয়ার জন্য, দ্বিতীয় মামলাটি হবে আক্রমণ করার জন্য আরেকটি মামলা হবে মারামারি করার জন্য। এছাড়া একটি হত্যা চেষ্টা মামলা হবে, যেহেতু তারা সেনাসদস্যকে গলা চেপে ধরে হত্যা করতে চেয়েছিল। আরেকটি মানহানি মামলা করা হবে।
র্যাব অধিনায়ক বলেন, আরএনবি সদস্যদের মধ্যে ৫-৬ জনের একটি দল মেইল ট্রেনের বগি নিয়ে নেয়। এরপর সেখানে উঠতে গেলে যাত্রীদের কাছ থেকে তারা অতিরিক্ত টাকা নেয়। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
জেএন/কেকে