গেল কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত। তার সাথে উজানের পাহাড়ি ঢলে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছাসহ তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে জেলার ৩ উপজেলার তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরে বসবাসরত প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট।
গ্রাম হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে। ওইসব গ্রামের বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, তিস্তা নদীর উজানে ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এতে করে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, গজঘণ্টা, মর্ণেয়া, গঙ্গাচড়া সদর, কাউনিয়ার পাঞ্জরভাঙ্গা, পীরগাছার শিবচর, হাগুড়িয়াসহ তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পান্দিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বন্যার হাত থেকে বাঁচতে গবাদিপশু-পাখি নিয়ে নদীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার। এদিকে বন্যা পরিস্থিতির কারণে চরাঞ্চলগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
ডুবে গেছে চরাঞ্চলের আমনের ক্ষেত। এদিকে গতকাল উজানের ঢল কমে যাওয়ায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
বিকাল ৩টায় ওই পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৩৫ সে.মি.। যা বিপদসীমার ২৫ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ডালিয়া পয়েন্টে পানি কমে আসলেও রংপুরের ৩ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।
লহ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ ওয়ার্ডের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
বিগত সময়ে যেসব গ্রামে পানি ঢোকেনি এবার সেসব গ্রামও প্লাবিত হয়েছে। চরের মানুষের ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পশ্চিম বাগেরহাট আশ্রয়ণ কেন্দ্র এলাকার ৪শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বিনবিনা চরের রাহেলা খাতুন জানান, হঠাৎ করে রাতের বেলা তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘরবাড়ি ফেলে গবাদিপশু নিয়ে তিস্তার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। খোলা আকাশের নিচে থাকায় রাতে বৃষ্টির পানিতে পুরো পরিবারের সদস্যরা ভিজে গিয়েছি।
ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে, খাবার নাই, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। আমরা চরম কষ্টে রয়েছি। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর জয়রামওঝার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, নদীর তীরবর্তী এলাকায় আমার আমনের ক্ষেত ছিল। তা নদীতে পুরোটাই ডুবে গেছে। যদি বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, তবে আমনের ক্ষেত রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় তিস্তার উজানের অংশ সিকিম ও গ্যাংটকে আবার মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে।
এতে করে তিস্তা নদীর পানি পুনরায় বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তিস্তা নদীর তীরবর্তী উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ বার্তা পৌঁছানো হয়েছে। নদীভাঙন রোধে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
পানি বেড়ে যাওয়ায় মাইকিং করে পানিবন্দি মানুষকে বাড়ি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান।
জেএন/পিআর