মন্ত্রীর স্বপ্ন আর উপাচার্যের আন্তরিকতায় অবশেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নির্মিত হতে যাচ্ছে হাইটেক পার্ক। ইতোমধ্যে এটি নির্মাণের বিষয় চূড়ান্ত করেছে সরকার। এজন্য ৬০-৭০ একর জমি চেয়ে চবিতে চিঠি পাঠিয়েছে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। গত রোববার (২১ অক্টোবর) চিঠিটি চবিতে পৌঁছে।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত টিমকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে মনে করেছে, এটি এ পার্ক স্থাপনের উপযুক্ত স্থান। ২১ অক্টোবর মন্ত্রী (আইসিটি) মোস্তফা জব্বার জানিয়েছেন সরকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইটেক পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে মন্ত্রণালয় ৬০-৭০ একর জমি চেয়ে চিঠি দিয়েছে। আমি জানিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আমরা একশ’ একর জমিও দিতে পারবো। কারণ সীমানাপ্রাচীর করতে গিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকে শেষপ্রান্ত পর্যন্ত জমি নির্ধারণ করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভৌতবিজ্ঞান ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পর থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেন পর্যন্ত একশ’ একরের বেশি সমতল জমি রয়েছে। এ জমি হাইটেক পার্কের জন্য বরাদ্দ দিতে আমরা আগ্রহী। কয়েক দিনের মধ্যে আইসিটি মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন হবে।
এদিকে হাইটেক পার্ক নির্মাণে চবি উপাচার্যের আগ্রহ ও সহায়তার বিষয়টি উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে চবি উপাচার্য ড. ইফতেখান উদ্দিন চৌধুরী ও চবি কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. হানিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে লিখেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হানিফ সিদ্দিকী, হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আমি। আজ আমরা কথা বললাম এক বিশাল স্বপ্ন নিয়ে। ভিসি স্যার শত একর ভূমি প্রদান করার ব্যবস্থা করলেন। আর আমরা সেখানে একটি ডিজিটাল পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করলাম। অভিনন্দন চট্টগ্রাম।’j
আইসিটি মন্ত্রণালয় ও চবি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় চবিতে আইসিটি মন্ত্রণালয় হাইটেক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। চীন, জাপান, কোরিয়াসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র এ প্রকল্পে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তি নির্মাণের কাজ করবে। তিন স্তরের কাজ হবে এ আইটি কিংবা হাইটেক পার্কে। এগুলো হলো- ট্রেনিং, ম্যানুফ্যাকচার ও ডিস্ট্রিবিউশন। এ প্রকল্পের আওতায় প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তৈরি হবে নতুন নতুন প্রযুক্তি। এখান থেকে এসব প্রযুক্তি বিশ^ব্যাপী বিপণনও করা হবে।
হাইটেক পার্ক নিয়ে জয়নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় চবি উপাচার্য বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে। আমরা চাই এর নামকরণ হোক ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক ভিলেজ’। আমাদের স্বপ্ন হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হবে দেশের প্রধান আইটি হাব।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের টিম চেয়েছিল যোগাযোগের সুবিধার্থে চবি রেলস্টেশনের পাশে এ পার্ক স্থাপন করতে। কিন্তু ওই স্থানে আমাদের মাত্র আট একর জমি ছিল। আমি তাদের জানাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সমতল একশ’ একর জায়গা চাইলেও আমরা দিতে পারবো। ওই জমিতে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। আইসিটি হাবে পৌঁছাতে স্বতন্ত্র যাতায়াত ব্যবস্থা থাকবে।
উপাচার্য আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ প্রকল্পের লিয়াঁজো অফিসার করা হয়েছে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. হানিফ সিদ্দিকীকে। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় অটোমেশন প্রকল্পের সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করছেন।
চবির প্রতিটি ক্ষেত্রকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর, প্রতিটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট এখন অটোমেশনের আওতায় আনার কাজ শুরু হয়েছে। লাইব্রেরির জন্য নতুন একটি আইসিটি সেল করা হয়েছে। নতুন করে সাজানো আইসিটি সেল আগামী ২৫ অক্টোবর উদ্বোধন হবে।
জয়নিউজ/শহীদ