ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ট্রানজিট চুক্তির আওতায় কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বন্দর থেকে এক কনটেইনার লৌহজাত পণ্য (টিএমটি বার) নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌছেছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি ট্রান্স সামুদেরা।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত আটটার দিকে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি জেটিতে ভিড়ে। বন্দরের শক্তিশালী টাগ কাণ্ডারী ১১ জাহাজটিকে বার্থিংয়ে সহযোগিতা করে।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্টকে অব গুডস টু এন্ড ফরম ইন্ডিয়া’ চুক্তির আওতায় এ চালান আসছে। যা সড়ক পথে শ্যাওলা (সিলেট)-সুতারকান্দি (ভারত) স্থলবন্দর দিয়ে আসাম নেওয়া হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ট্রানজিট চুক্তি হয়েছে আগেই। চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসহ অন্য যে কোনো দেশে সহজে পণ্য পরিবহন করতে পারবে।
২০২০ সালে এমভি সেঁজুতি জাহাজে কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ট্রানজিটের চার কনটেইনার পণ্য এসেছিল। গত মাসে মোংলা বন্দর দিয়ে ট্রানজিটের আরেকটি সফল ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তির শর্ত মোতাবেক বর্তমানে তৃতীয় ট্রায়াল রান হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
ম্যাংগো লাইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান জানান, রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি ট্রান্স সামুদেরা জাহাজটি এক কনটেইনার লৌহজাত পণ্য (টিএমটি বার) নিয়ে কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। আজ রাতে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌছে।
মোবাইল হারবার ক্রেন ও কি গ্যান্ট্রি ক্রেন ব্যবহারে রাতের মধ্যেই ১২০টি কনটেইনার আনলোড করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটির দায়িত্বে থাকা টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের চিফ অপারেটিং অফিসার ক্যাপ্টেন তানভীর হোসেন।
ট্রানজিট পণ্যভর্তি কনটেইনারটি বন্দরের বিভাগের বিশেষ তত্ত্বাবধানে রাখা হবে। কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা শেষে কনটেইনারটি সড়কপথে সিলেট চলে যাবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে ট্রায়াল রান সম্পন্ন হচ্ছে- এটি গৌরবের। এতে বন্ধুপ্রতিম দুই দেশ উপকৃত হবে।
বন্দরের ফি, কাস্টমসের শুল্ক আহরণ বাড়বে, ট্রানজিট পণ্য পরিবহনে ভাড়া পাবে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা৷ তবে আমাদের সড়ক ও রেলপথ অবকাঠামো কানেক্টিভিটি উন্নত করতে হবে৷ পাশাপাশি বন্দরের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশের কী লাভ হবে : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ২০১৫ সালের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের ভেতর হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে ভারতের পণ্য পরিবহনের বিষয়ে একটি সমঝোতাপত্র সই হয়। দুই দেশের ভেতরে নদীপথ ও বন্দর ব্যবহার বিষয়ক ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড’ তৈরি হয়েছে।
এরপর ২০১৯ সালে এই দু’টি বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে একটি চুক্তি হয় দু’দেশের মধ্যে। তারই অংশ হিসেবে একে একে পরীক্ষামূলক জাহাজ বাংলাদেশে আসা শুরু হয়। বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহন ভারতের জন্য অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী হবে।
বাংলাদেশের সরকারের তরফ থেকে সবসময় বলা হয়েছে, ভারত বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে এতগুলো রাজ্যে পণ্য পরিবহন করলে দেশের বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং রাজস্ব বিভাগ বাড়তি অর্থ আয় করতে পারবে।
জেএন/পিআর