উত্তর কোরিয়া নিজেকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে একটি আইন পাস করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা কেসিএনএ। দেশটির নেতা কিম জং-উন এই সিদ্ধান্তকে ‘অপরিবর্তনযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে কোনো আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন পাস করা এই আইনটিতে নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য পারমাণবিক হামলার অধিকারকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে উত্তর কোরিয়া। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, পিয়ংইয়ং ২০০৬ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ছয়টি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে।
২০১৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দুই দফায় হওয়া সিদ্ধান্তহীন শীর্ষ বৈঠকের পরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ এবং পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিলেন কিম জং উন। এরপর থেকে এই দুই দেশের মধ্যে আলোচনা থমকে গেছে।
যদিও বাইডেন প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা পিয়ংইয়ংয়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক, তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমের সাথে দেখা করবেন কিনা তা বলা হয়নি। হোয়াইট হাউস আরও বলছে, পিয়ংইয়ংয়ের সাথে যোগাযোগ করার প্রচেষ্টা এবং দেশটির কোভিড প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে সহায়তার বিষয়ে দেওয়া প্রস্তাবগুলোরও এখনও পর্যন্ত উত্তর পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র গত বছর তার উত্তর কোরিয়া নীতি পর্যালোচনা করে এবং বলেছে যে- কোরীয় উপদ্বীপের ‘সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ’ তাদের লক্ষ্য। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন, কূটনীতি এবং ‘কঠোর প্রতিরোধ’ এর মিশ্রণের মাধ্যমে এই নীতি অনুসরণ করবেন তিনি।
তবে এর প্রতিক্রিয়ায় কিম বলেছিলেন, তার দেশকে অবশ্যই ‘সংলাপ এবং সংঘর্ষের’ জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
এদিকে, পিয়ংইয়ং রেকর্ড সংখ্যক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সাথে এই বছর কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা বেড়েছে। চলতি বছর কিম রেকর্ডসংখ্যক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছেন এবং ২০১৭ সালের পর থেকে দেশটি হয়তো প্রথমবারের মতো পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
গত আগস্টের মাঝামাঝিতে এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছিল, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মূল মনোযোগ এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দিকে সরে গেছে এবং এই সুযোগে কিম জং উন তার উস্কানিমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চলতি বছর ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরু থেকে গত কয়েক মাসে দফায় দফায় উত্তর কোরিয়া তার বৃহত্তম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম)-সহ একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-দ. কোরিয়ার সামরিক মহড়ার জবাবে একসঙ্গে ৮টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল দেশটি।
এর আগে গত ২৫ মে আরেক দফায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। সেসময় বাইডেন পূর্ব এশিয়া ত্যাগ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একে একে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিলেন কিম।
এই পরিস্থিতিতে মে মাসের শেষের দিকে উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য দেশটির ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা দিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ওয়াশিংটনের সেই প্রস্তাবে ভেটো দেয় চীন ও রাশিয়া।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাত দফায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল পিয়ংইয়ং। উত্তর কোরিয়ার মতো অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশ কীভাবে একের পর এক এমন পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে বহু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যদিও একের পর এক পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার জন্য উত্তর কোরিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ।
জেএন/কেকে