ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়েছে চট্টগ্রামে

চট্টগ্রামে গত কয়েক বছরের তুলনায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। চলতি বছর প্রথম আট মাসে শুধু চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ৬৩ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়। এ সময় মৃত্যু হয় ৯ জনের; যেখানে আগের দুই বছরে মোট ৩৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। আর মৃত্যু হয়েছিল ১২ জনের।

- Advertisement -

চমেক হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। শুধু এই হাসপাতাল নয়, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার মধ্যে পাঁচ জেলায়ই (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি) ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

- Advertisement -google news follower

এদিকে ম্যালেরিয়া বেড়ে যাওয়া নিয়ে গত রবিবার ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট ২৮ চিকিৎসক-কর্মকর্তার বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়। জানতে চাইলে ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী গত সোমবার বলেন, ‘ম্যালেরিয়া রোগী শূন্য হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা আস্তে আস্তে বাড়ছে। আমরা সতর্ক আছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করে যেতে হবে।’

চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০২০ সালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে এক হাজার আট জনের পরীক্ষা করে ১৩ জনের ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়। পরের বছর এক হাজার ৪৬৩ জনের পরীক্ষায় শনাক্ত হয় ২৬ ম্যালেরিয়া রোগী। আর চলতি বছরের গত আট মাসেই এক হাজার ২৪২ জনের পরীক্ষায় ৬৩ জনের ম্যালেরিয়া ধরা পড়ে। ম্যালেরিয়ায় ২০২০ সালে ছয়জন, ২০২১ সালে ছয়জন এবং চলতি বছরের আট মাসেই ৯ জন মারা যায়। তাদের মধ্যে বান্দরবানের দুই, রাঙামাটির এক, কক্সবাজারের দুই, চট্টগ্রামের তিন এবং রংপুরের একজন বাসিন্দা রয়েছে।

- Advertisement -islamibank

এদিকে গত রবিবার চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে জানা যায়, আগের দুই দিনে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা নেওয়ার পর পাঁচজন ছাড়পত্র পেয়েছে। গত ৩০ আগস্ট বান্দরবানের লামা থেকে ম্যানথো (১৪) নামের এক কিশোর ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে চমেক হাসপাতালের ১৩ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। তিন দিন চিকিৎসার পর গত ২ সেপ্টেম্বর দুপুরে স্বেচ্ছায় হাসপাতাল থেকে চলে গেছে ওই কিশোর। ৯ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে জানা যায়, ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন চার শিশু সুুস্থ হয়ে গত শনিবার হাসপাতাল ছেড়ে যায়।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিভাগের ওই পাঁচ জেলায় ২০২০ সালে মোট ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয় ছয় হাজার ১০৪ জন, মারা যায় সাতজন। পরের বছর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় সাত হাজার ২০১ জনে। মৃতের সংখ্যাও বাড়ে, ৯ জন। আর চলতি বছর প্রথম ছয় মাসেই (জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত) এই পাঁচ জেলায় ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে ছয় হাজার ৯০৯ জন। আর মারা গেছে অন্তত ১২ জন। বছর শেষে শনাক্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এসব তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়েছে তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারে।

ম্যালেরিয়া রোগ প্রতিরোধে গবেষণায় কাজ করা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ জয় কালের কণ্ঠকে বলেন, হঠাৎ করে ম্যালেরিয়া বেড়ে যাওয়াটা উদ্বেগজনক। আগে পাহাড়ি এলাকায় মানুষ আক্রান্ত হলেও এখন শহরাঞ্চলের মানুষ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হচ্ছে।

কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ম্যালেরিয়া বাড়লেও বাজারে প্রতিষেধক ট্যাবলেট ও ইনজেকশন সরবরাহ কিছুটা কম। জানতে চাইলে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্ভেইল্যান্স মেডিক্যাল অফিসার (এসএমও) ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির আওতায় সরকারিভাবে পরীক্ষার কিটসহ সব ওষুধ হাসপাতালে সরবরাহ রয়েছে। তবে বাজারে এই ওষুধ সহজলভ্য নয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

প্রায় একই কথা জানালেন বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও চট্টগ্রামের সভাপতি সমীর সিকদার। তিনি বলেন, ‘আগে নামিদামি একাধিক ওষুধ কম্পানির ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক ট্যাবলেট ও ইনজেকশন বাজারে ছিল। এখন বাজারে সরবরাহ কম।’

জেএন/কেকে

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM