ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে প্রায় সাড়ে ১৪ ঘণ্টা তল্লাশি অভিযান চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) কর্মকর্তারা। স্থানীয় সময় শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে গার্ডেনরিচসহ কলকাতার ছয়টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান শুরু করে ইডি।
এ সময় ব্যবসায়ী আমির খানের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে ১৭ কোটি ৩২ লাখ ভারতীয় মুদ্রা। এছাড়া, তার অফিস থেকে আরও কয়েক কোটি রুপি নগদ উদ্ধার হয়েছে। ইডির একটি সূত্রের বরাতে এসব তথ্য জানায় পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা।
ইডি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে গার্ডেনরিচের আমিরের বাড়িতে রুপি গোনার কাজ শুরু করেছিলেন ব্যাংককর্মীরা। পাশাপাশি, ওই বাড়িতে আরও রুপি রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে তল্লাশি চালিয়েছেন ইডির কর্মকর্তারা। সকাল থেকে রাত হয়ে গেলেও নোট গোনার মেশিনে আমিরের বাড়ি থেকে উদ্ধার রুপি গোনার কাজ চলতেই থাকে। পরে কয়েক ট্রাঙ্ক নগদ রুপি তোলা হয়েছে আমিরের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ইডি কর্মকর্তাদের যে দলটি অভিযান শুরু হয়েছিল, তা শেষ হয় রাত ১১টার দিকে। এই সাড়ে ১৪ ঘণ্টার অভিযানে ইডির হাতে উঠে এসেছে ১৭ কোটি ৩২ লাখ রুপি। হদিস পাওয়া গিয়েছে বিপুল সম্পত্তিরও।
সূত্রের খবর, একটি মোবাইল গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগের তদন্তে নেমে গার্ডেনরিচের শাহী আস্তাবল গলি, পার্ক স্ট্রিট, মোমিনপুরের বন্দর এলাকা, নিউটাউনসহ কলকাতার ছয়টি জায়গায় অভিযান শুরু করেছিল ইডি। কেন্দ্রীয় সংস্থাটির কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সিআরপিএফ জওয়ানেরা। অভিযানের সময় সিআরপিএফ জওয়ানদের আমিরের বাড়ির বাইরে মোতায়েন রাখা হয়। ভেতরে চলতে থাকে চিরুনি তল্লাশি।
শনিবার সকালেই সাদামাটা ওই দোতলা বাড়িতে তল্লাশি শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বেরিয়ে আসে অসংখ্য প্লাস্টিকের থলেতে মোড়া নোটের বান্ডিলের পর বান্ডিল। সূত্রের খবর, দোতলায় একটি ঘরের খাটের তলা থেকে অসংখ্য বান্ডিলে মোড়া ৫০০ রুপি র নোট বের হতে থাকে। অনেকগুলো প্লাস্টিকের থলিতে সেগুলো মুড়ে খাটের তলায় রাখা ছিল। বান্ডিল গুনতে আসেন স্টেট ব্যাংকের কর্মীরা। আনা হয় নোট গোনার আটটি যন্ত্রও। এক সময় দেখা যায়, আমিরের বাড়ির দরজার বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে ১০টি স্টিলের ট্রাংক ভরা ট্রাক। রাতের দিকে আরও কয়েকটি ট্রাংক আনা হয় আমিরের বাড়িতে। গার্ডেনরিচে আমিরের বাড়ি ছাড়াও, তাঁর নিউটাউনের অফিসেও শনিবার হানা দিয়েছিল ইডি। সেখান থেকেও বেশ কয়েক কোটি রুপি উদ্ধার হয়েছে। এমনটাই জানা গিয়েছে ইডি সূত্রে।
শনিবার এই তল্লাশি অভিযানের মাঝেই একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে ইডি। তাতে ইডি জানায়, গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ী নিসার আহমেদ খানের ছেলে আমিরের বিরুদ্ধে পার্ক স্ট্রিট থানায় একটি প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করা হয় চলতি বছরের শুরুর দিকে। সেই পুরনো মামলার তদন্তে নেমে শনিবার সকালে আমিরের বাড়ি ও অফিসে অভিযান শুরু করেছিল তারা।
একটি মোবাইল গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে বহু গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে আমিরসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্ক স্ট্রিট থানায় একটি এফআইআর করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে ইডি। ওই এফআইআরে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪৬৮, ৪৭১, এবং ৩৪ ধারায় প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গসহ একাধিক অভিযোগ করা হয়েছে।
ইডির দাবি, ‘ই-নাগেটস’ নামে একটি মোবাইল গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকদের অর্থ হাতিয়ে নিতেন আমিররা। ওই অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকেরা গোড়ায় বেশ ভালো কমিশন পেতেন। অ্যাপটির মাধ্যমে নিজেদের ওয়ালেটে সেই অর্থ পেয়ে যেতেন গ্রাহকেরা। এভাবেই গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনের পর আমিররা তার ফায়দা তুলতেন বলে ইডির দাবি।
আরও মোটা কমিশনের লোভে গ্রাহকেরা বড়সড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করলে আচমকাই সুযোগ বন্ধ হয়ে যেত বলে অভিযোগ। অ্যাপের ‘সিস্টেম আপগ্রেড’-সহ নানা অজুহাত দেখিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হতো বলে দাবি। ফলে ওই অ্যাপের সার্ভার থেকে সমস্ত প্রোফাইল সংক্রান্ত তথ্যও মুছে যেত।
ইডির আরও দাবি, সেই সময়েই গ্রাহকেরা টের পেতেন যে, তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। শনিবার তল্লাশিতে আমিরের বাড়ি থেকে যে নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে তাতে একাধিক ভুয়ো অ্যাকাউন্টের খোঁজও পাওয়া গিয়েছে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ইডি।
জেএন/কেকে