চলতি মাসের প্রথম থেকেই পাবনা ও ঈশ্বরদীতে দ্রুতগতিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। গত ১৫ দিনে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ও ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৫ জনের বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনো ২০ জন ভর্তি রয়েছেন।
রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গত ১৫ দিনে ১৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ছয়জন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় সবাই রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে কর্মরত রয়েছেন।
ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. আসমা খান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে পাঁচজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন। সবাই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের শ্রমিক। এছাড়া বিভিন্ন ক্লিনিকে ২০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ভর্তিদের হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ৫-৬ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের প্রায় সবার কর্মস্থল পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে। আরেকজন ঢাকায় মাদরাসায় পড়ালেখা করেন। অন্যদের কেউ ছাত্র, কেউ ব্যবসায়ী আবার কেউ বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন।
কথা হয় রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের ট্রেস্ট রোসেম কোম্পানিতে কর্মরত রাসেল বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সকালে কোম্পানির কাজে যোগদান করি। দুপুরের দিকে ডিউটিরত অবস্থায় তীব্র জ্বর হয়। পারমাণবিক প্রকল্পের ভেতরের হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিই। সেখান থেকে কিছু ওষুধ লিখে দেওয়া হয়। সেগুলো বাড়িতে গিয়ে খাওয়ার পরও শরীরের অবস্থা পরিবর্তন না হলে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হই। পরে রিপোর্টে জানতে পারি ডেঙ্গু হয়েছে।
কথা হয় রূপপপুর প্রকল্পের কর্মরত মেহেদী হাসান নামে আরেকজনের সঙ্গে। তিনি গত ৫ দিন ধরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেও তিনি পরিবেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এতবড় একটা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড নেই। মেডিসিন ওয়ার্ডে শত শত রোগীর মাঝে আমাদের রাখা হয়েছে। হাসপাতালের ভেতরে নোংরা পরিবেশ ঠিকমত পরিষ্কার করে না। ওয়াশরুম-টয়লেটে গেলে মশার কামড়ে থাকা যায় না। সাধারণ রোগীও আমাদের সঙ্গে চলাফেরা করছে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য তিনি পৃথক ওয়ার্ডের দাবি করেন।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালরে সিনিয়র স্টাফ নার্স ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিসিন ওয়ার্ডের ইনচার্জ হালিমা খাতুন শান্তা বলেন, আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে ১০ জনের মতো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন। প্রায় সবাই ঈশ্বরদী থেকে আসছেন। তারা রূপপুর প্রকল্পে চাকরি করেন। আবার কেউ ঢাকা থেকেও আক্রান্ত হয়ে আসছেন। সবাইকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একই ওয়ার্ডে সাধারণ রোগী ও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ব্যাপারে তিনি বলেন, এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওমার ফারুক মীর বলেন, পাবনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। অল্প আক্রান্তদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জটিলদের হাসপাতালে ভর্তি করে রাখা হচ্ছে। হাসপাতালেই শনাক্তের সরঞ্জামাদি রয়েছে। কাউকে বাইরে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে না। কেউ বেশি জটিলতায় থাকলে আমরা ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করব। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোধের জন্য সংশ্লিষ্ট পৌরসভার ভূমিকা পালন করা দরকার। পাবনায় এডিস মশার লার্ভা শনাক্তের জন্য কেউ কাজ করে কিনা আমার জানা নেই।
পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, আক্রান্তদের বেশিরভাগই রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত। কয়েকজন ঢাকা থেকেও অসুস্থ হয়ে এসেছেন। যারা ভর্তি আছেন তাদের সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অনেকের উন্নতি হওয়ায় তারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আবার কেউ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, জেলায় এখন পর্যন্ত এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি। প্রায়ই আমরা বিভিন্ন সন্দেহজনক স্থানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি। সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করছি। ময়লা-আবর্জনা জমে আছে এমন এলাকায় স্প্রে করা হচ্ছে। সামাজিকভাবেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
জেএন/কেকে