সাগর যেন এবার কৃপণ হয়ে গেছে। ভরা মৌসুমেও সাগরে জাল ফেলে দেখা মিলছে না ইলিশের। অতচ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশের দেখা মিলবে।
কিন্তু ভরা মৌসুমেও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড,মিরসরাই,আনোয়ারা উপজেলা ও নগরীর কাট্টলী ঘাটের জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্খিত ইলিশ।
আশা ছিল, ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়বে। শুরুর কয়েক দিন কিছু মাছ জালে পড়লেও আগষ্টের পর আর মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। ফলে জেলেদের মধ্যে দাদন, মহাজনী লোন, দৈনিক সুদের টাকা পরিশোধ করার চাপে হতাশার ছাপ দেখা দিয়েছে।
চরম অভাব-অনটনে আছেন মিরসরাইয়ের উপকূলীয় অঞ্চলের ৫ শতাধিক জেলে পরিবারের প্রায় ১০ হাজার সদস্য। নদীতে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে সংসার চালানো দূরের কথা, ট্রলারের তেলের দামই উঠছে না বলছেন জেলেরা।
অন্যদিকে সরবরাহ কম থাকায় ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম বেশ চড়া। ইচ্ছে থাকা সত্তেও ইলিশ মাছ ক্রয় না করেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের। চলতি বছরে অনেক নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার এখনো ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেনি।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে এখন এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২শ থেকে ১ হাজার ৫শ টাকা। এমনকি ৫শ থেকে ৬শ গ্রাম ওজনের ইলিশও ৭শ থেকে ৯শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের বৃহৎ মাছের আড়ৎ ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ভরা মৌসুমেও ইলিশের সরবরাহ তুলনামূলক কম। এ প্রসঙ্গে আড়তের ব্যবসায়ী সাগর দাশ বলেন, প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে বাজারে ইলিশ দিয়ে ভর্তি থাকে। কিন্তু এবার সে তুলনায় ইলিশ নেই। তাই দামটাও বেশি।
এছাড়া দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সরকার ভারতে ইলিশ রপ্তানি করছে। এর কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে আহরণ বাড়লে দামও কমে আসবে বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রামের ইলিশের অন্যতম আরেকটি স্পট কাট্টলি সমুদ্র ঘাটে রবিবার ভোরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দুর-দুরান্ত থেকে শতাধিক মানুষ জড়ো হয়েছেন সাগরের তাজা ইলিশের আশায়। সবাই মাছের জন্য হুমড়ি খাচ্ছেন। কিন্তু মাছ নেই!
এক একটি নৌকা থেকে কয়েক মন করে মাছ নামার কথা, কিন্তু তার বিপরীতে ৩-৫ কেজি করে মাছ নামছে। জেলেদের চোখে মুখে যেন রাজ্যের অন্ধকার। খালি হাতে ফিরে গেছেন সব ক্রেতা। আনোয়ারা, সীতাকুণ্ডে ঘাটেও এখনকার চিত্র এমন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ইলিশ মূলত সাগরের মাছ। কিন্তু এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নদীতে ইলিশ কম আসছে। মূলত বৈরী আবহাওয়ার জন্যই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তারা বলেছেন, চাঁদপুর, বরিশালের পাশাপাশি চট্টগ্রাম অঞ্চলেও গত আগস্ট মাসে তাপমাত্রা বেশি ছিল। চলতি সেপ্টেম্বরেও প্রায় একই অবস্থা। তাপমাত্রা বেশি থাকলে সাগর থেকে নদনদীতে ইলিশ আসবে না।
অথচ জাটকা নিধন বন্ধ ও প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে এবার ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করেছিলো মৎস্য অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন জেলে ও আড়তদারের সাথে কথা বললে তারা ভারতের জেলেদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানোর অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এখনো ভারতের জেলেরা আমাদের জলসীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ এবং ভারতে একই সময়ে অবরোধ না দিলে আমাদের জেলেরা ইলিশে মার খেতেই থাকবে। দেশি জেলেদের রক্ষা করতে এ ব্যাপারে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ।
মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, সাগর উত্তাল না থাকলে আরও বাড়বে ইলিশের আহরণ।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা লাভলী ফারহানা বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইলিশের মৌসুমে কিছু পরিবর্তন হওয়ায় এবার নদীতে ইলিশ আসতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।
তবে সাগর থেকে প্রচুর ইলিশ নদীতে আসতে শুরু করেছে। আশা করা যায় চলতি মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নদীতে ইলিশ আসা অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া ইলিশ নিয়ে যেন কেউ কারসাজি করতে না পারে সেদিকে প্রশাসনের নজর আছে বলেও তিনি জানান।
জেএন/পিআর