এক হাজার পিস ইয়াবাসহ গত ১৬ আগস্ট পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন সিদ্দিক আহমেদ (৬২)। পরদিন আদালতে হাজির করার সময় তার পেট ব্যথা শুরু হয়। রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ফের আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু ব্যথা না কমায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সঙ্গে সঙ্গে তাকে মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠান। সেখানে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।
চিকিৎসার শুরু থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেট ব্যথার আসল কারণ লুকিয়ে রাখেন সিদ্দিক আহমেদ। বিষয়টি ধরা পড়ে ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে। চিকিৎসক দেখতে পান, তার পেটে কালো পলিথিন প্যাঁচানো একটি প্যাকেট। সেখানে মেলে ৩৫ পিস ইয়াবা।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক জানান, ওই প্যাকেটের কারণে সিদ্দিক আহমেদের পেটে ব্যথা হয়। অথচ শুরু থেকে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুকে বরণ করতে হয় তাকে।
মতিঝিল গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রমনা থানার ইস্কাটন গার্ডেন সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টারের ৫ নম্বর গেটের সামনে অভিযান চালায় তাদের একটি দল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় আটক করা হয় সিদ্দিক আহমেদকে। এ সময় তার কাছ থেকে এক হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। ওই দিনই উপ-পরিদর্শক (এসআই) এরশাদ হোসেন বাদী হয়ে রমনা থানায় মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৯।
ময়নাতদন্তের সময় ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক তার পেটে কালো স্কচটেপ দিয়ে প্যাঁচানো একটি প্যাকেট পান। প্যাকেট খোলার পর দেখা যায় সেখানে ৩৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। পরে ফরেনসিক বিভাগ থেকে আলামত হিসেবে ৩০ পিস ইয়াবা আমার কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি পাঁচ পিস রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য মহাখালী পাঠানো হয়
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুব্রত দেবনাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ময়নাতদন্তের সময় ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক তার পেটে কালো স্কচটেপ দিয়ে প্যাঁচানো একটি প্যাকেট পান। প্যাকেট খোলার পর দেখা যায় সেখানে ৩৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। পরে ফরেনসিক বিভাগ থেকে আলামত হিসেবে ৩০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট আমার কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি পাঁচ পিস রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য মহাখালী পাঠানো হয়।
ময়নাতদন্তের সময় পেটের ভেতরে পলিথিনে মোড়ানো ৩৫ পিস ট্যাবলেট আমরা পেয়েছিলাম। তবে সেটা ইয়াবা কি-না, তা জনতে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঁচ পিস আমরা মহাখালীতে পাঠিয়েছি। বাকি ৩০ পিস আলামত হিসেবে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেলে বলতে পারব ট্যাবলটেগুলো ইয়াবা কি-না
সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি— বলেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার রিফাত রহমান শামীম বলেন, সিদ্দিক আহমেদ ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার নামে ২০১৭ সালে টেকনাফ থানায় একটি মামলা (মামলা নং-৯), ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জ থানায় একটি (মামলা নং-১৮) এবং ২০২১ সালে কর্ণফুলী থানায় একটি মাদকের মামলা (মামলা নং-৪২) রয়েছে। তার পরিবারও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ময়নাতদন্ত শেষে তার ছেলে ও জামাতার কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
আমরা বুঝতেই পারিনি তার পেটে ইয়াবা থাকতে পারে। এমনকি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি বলেননি তার পেটে ইয়াবা আছে। যদি তিনি বিষয়টি আমাদের জানাতেন তাহলে তার পেট থেকে ইয়াবা বের করার ব্যবস্থা করতাম। ইয়াবাগুলো বের করলে হয়তো তিনি বেঁচে যেতেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
জয়নিউজ/পিডি