শত কোটি টাকার পুরানো একটি জাহাজকে স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির জন্য সীতাকুণ্ডের কুমিরার সমুদ্র উপকূলবর্তী খাজা শিপইয়ার্ডে আনা হয় ২০১৫ সালে। কয়েক মাসের মধ্যে এরকম আরও কয়েকটি জাহাজ আনার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবসার অংশীদারীত্বের প্রস্তাব দেয় প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। এ কাজে সহযোগী হিসেবে সে আশেপাশের ২০/২৫ জন লোককে মাসিক বেতনে রাখত। তাদের মাধ্যমে কোটিপতি ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে অল্প সময়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা হাতিয়ে অল্প সময়ে বনে গেছেন কোটিপতি।
অবশেষে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন হামজারবাগ আজাদ কমিউনিটি সেন্টারের উপর জনৈক মসিউর রহমানের ভাড়া বাসায় থেকে তাকে আটক করে র্যাব-৭।
মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী (৪২) হাটহাজারির কাটিরহাটের আবু তাহের চৌধুরীর সন্তান। তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী এবং কোতয়ালী থানায় বিভিন্ন প্রতারণার ২২টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে ১১টি মামলাতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদন্ড দেওয়া হয়। বাকী মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
র্যাব-৭ এর সহকারি পরিচালক (মিডিয়া) মোঃ নূরুল আবছার বলেন, জাহাজ স্ক্র্যাপ বিক্রির নামে ব্যবসায়ী
আব্দুল হাকিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, আজগর আলী থেকে ৭০ লক্ষ টাকা, মোঃ রেজওয়ানের থেকে ৪০ লক্ষ টাকা, ইব্রাহীমের কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা, মোঃ রুমনের ৬৩ লক্ষ টাকা, শহিদুল ইসলামের ৯০ লক্ষ টাকা, জাহিদুল ইসলামের ৫০ লক্ষ টাকা, আসাদের ৫০ লক্ষ টাকা, বেলালের ৫০ লক্ষ টাকা এবং শাহজাহানের কাছ থেকে ২ কোটি টাকাসহ জানা অজানা অসংখ্য ভুক্তভোগীর কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন।
র্যাব জানায়, প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন কিছু বাজেয়াপ্ত কন্টেইনার ভিকটিমদের দেখিয়ে প্রচার করে একটি কন্টেইনারে সে প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ পেয়েছেন। যা প্রায় ৫০০ কোটি টাকায় বিদেশে বিক্রি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত টাকা সীজ করেছে। এছাড়াও সে ৫টি ডায়মন্ড পেয়েছে যার প্রতিটির মূল্য ২ হাজার কোটি টাকা। ডায়মন্ডগুলোর বিক্রির টাকা পেতে হলে বিভিন্ন মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ’ কর্মকর্তাদের এর অংশ দিতে হবে। প্রতারক মেজবাহ ভিকটিমদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিভিন্ন উচ্চপদস্ত ’ কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীদের কন্ঠস¦র নকল করে কথোপকথনের রেকর্ড শুনাত।
র্যাব জানায়, প্রতারক মেজবাহ একই জমি বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা আদায় করত। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নগরীর বাড়াইপাড়া এলাকায় একটি জমির ভূয়া দলিল দেখিয়ে অন্ততঃ ১০ জনের কাছ থেকে টাবা নিয়েছেন।
র্যাব-৭ এর মুখপাত্র মোঃ নূরুল আবছার বলেন, মেজবাহকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় এসব অপকর্মে তার পরিবার তাকে সার্বিক সহযোগিতা করতো।
মেজবাহের চেক প্রতারণা
র্যাব জানায়, অভিযুক্ত প্রতারক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উচচপদস্ত কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে তার ব্যবসার শেয়ার দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করত। পরবর্তীতে তাদেরকে কোম্পানীর শেয়ারের টাকার লভ্যংশ দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ব্যাংকের চেক দিত। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা চেক নিয়ে ব্যাংকে গেলে দেখা যেত তার দেয়া চেকের বিপরীতে একাউন্টে কোন টাকা নেই। এভাবে সে বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতারনা করে আসছে। ভুক্তভোগীরা তার কাছে পাওনা টাকা চাইলে সে ভুক্তভোগীদের পূর্বে সংরক্ষিত স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ভূয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরি করে তাদেরকেই উল্টো মিথ্যা মামলার ভয় ও মামলা রুজু করে নাজেহাল করতো। মিথ্যা মামলার ভয়ে অনেক ভুক্তভোগীই পাওনা টাকার বিষয়ে মুখ খোলার সাহস করতো না।
গতকাল আটকের পর র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মেজবাহ প্রতারনার কথা নিজ মুখে অকপটে স্বীকার এবং বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতারনা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানায়। তাকে আজ হাটহাজারি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেএন/এফও/কেকে