নীলফামারীর সৈয়দপুরে সুইসাইড নোট লিখে ঘুমের ওষুধ সেবনে জ্যোতি আগারওয়াল নামের এক গৃহবধূ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ঘটনায় করা মামলায় তার স্বামী সুমিত কুমার আগারওয়াল নিক্কিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে রমেক হাসপাতাল চত্বর থেকে তাকে গ্রেফতাররের পর সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে রোববার রাতে সৈয়দপুর থানায় সুমিত কুমার আগারওয়াল নিক্কি, তান মা উমা দেবী আগারওয়াল, ভাই অমিত কুমার আগারওয়াল ও তার স্ত্রী ডা. অমৃতা কুমারী আগারওয়ালের নামে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করেন জ্যোতির বড়ভাই বিমল কুমার।
অভিযুক্ত সুমিত কুমার সৈয়দপুর শহরের সুপরিচিত ব্যবসায়ী এবং উপজেলা হিন্দু কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২১ বছর আগে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পুরাতন বাজার এলাকার মৃত পুরনমল জাজোদিয়া আগারওয়ালের মেয়ে জ্যোতির সঙ্গে সৈয়দপুরের নতুন বাবুপাড়ার ডা. বদরুজ্জামান রোডের বাসিন্দা সুশিল কুমার আগারওয়ালের ছেলে সুমিত কুমারের বিয়ে হয়।
এক সপ্তাহ আগে দুই পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট লিখে তার ছবি তুলে সৈয়দপুর হিন্দু কমিউনিটির সদস্যদের কাছে মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন জ্যোতি। কিন্তু কেউই তার ওপর পারিবারিক অত্যাচারের বিষয়ে সুরাহা করতে এগিয়ে না আসায় ১৫ সেপ্টেম্বর দিনগত রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। এরপর তাকে হাসপাতালে না নিয়ে পারিবারিকভাবে চিকিৎসা করাতে থাকেন নিক্কির ছোট ভাই অমিত কুমার আগারওয়ালের স্ত্রী ডা. অমৃতা কুমারী আগারওয়াল। এতে তার অবস্থার আরও অবনতি হয়। পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় ১৬ সেপ্টেম্বর তাকে রমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিন দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার মারা যান তিনি।
দুই পৃষ্ঠার সুইসাইড নোটে লেখা আছে, ‘আমার বিয়ে হয়েছে ২০০১ সালের ১২ ডিসেম্বর। বিয়ের পর থেকেই শাশুড়ি ও স্বামী-দেবর মানসিক নির্যাতন করছেন। দেবরের বিয়ের পর জা অমৃতাও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে অত্যাচার চালিয়ে আসছেন। ওরা আমাকে চারবার মেরে ফেলার চেষ্টা করেছেন। বেঁচে আছি সেটা আমার ভাগ্য। আমাকে সাজিয়ে মিথ্যে বলে আমার গয়না ও জমানো টাকা নিয়েছেন তারা। ফেরত দেবে বলে আজও দেননি; বরং টাকা ও গয়নার কথা বললেই অত্যাচারের মাত্রা বাড়ায়। গায়েও হাত তুলেছে সবাই মিলে। আমার মা-বাবা নেই। ভাই-বোনদের জন্য বেঁচে ছিলাম। কে জানত ওরা আমাকে মেরে ফেলবে? তাহলে তো ভাই-বোনরা ছেড়ে দিত না।
‘শাশুড়ি উমা দেবী আমাকে কখনো দেখতে পারেননি, ভালোও বাসেননি। আমার সংসার ভাঙার পেছনেও তার হাত রয়েছে। তিনি উল্টাপাল্টা বলে তার ছেলে সুমিতের কান ভরতেন। এমনকি আমার বাচ্চা দুটোকেও এরা ভয় দেখিয়ে রাখেন। এ কারণে তারা কিছু বলতে পারে না। ’
জ্যোতি আরও লিখেছেন, ‘মানুষ মৃত্যুর সময় কখনো মিথ্যে বলে না। বিশ্বাস না হলে কাজের লোক ও পাড়া-প্রতিবেশীদের জিজ্ঞেস করে দেখবেন। আমার শাশুড়ি অনেক অত্যাচার করেছে। ২১ বছর ধরে আমি শুধু কাঁদছি। এরা কখনোই সুখের দিন দেখতে দেয়নি। আমার মৃত্যুর বিচার চাই। ’
এদিকে গ্রেফতারের আগে সাংবাদিকদের জ্যোতির স্বামী সুমিত কুমার বলেন, সুইসাইড নোট বলে যে উড়ো চিঠির কথা প্রচার করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। কারণ, এটি আমার স্ত্রীর লেখা নয়। তার হাতের লেখার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। কীভাবে প্রমাণ করবেন যে চিঠিটা জ্যোতি লিখেছে?
সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গ্রেফতার সুমিত কুমারকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য উদ্ধার সুইসাইড নোটটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেএন/কেকে