দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের বেশি হয় সমুদ্রপথে। দেশি জাহাজের স্বল্পতার কারণে আমদানি ও রপ্তানির বেশিরভাগ পণ্য বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে বহন করা হয়। এসব পণ্য পরিবহনে বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা চলে যেত বিদেশে। বছর তিনেকের মধ্যে এ সংকট কাটতে শুরু করেছে। খুব অল্প সময়ে দেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে সমুদ্র পরিবহন। গত তিন বছরে বাংলাদেশী পতাকাবাহী বিদেশগামী জাহাজ নতুন যোগ হয়েছে ৪৮ টি জাহাজ। ফলে এ সংখ্যা দাঁড়ালো ৯১-এ।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক শাহেদ সারোয়ার বলেন, ‘সমুদ্রগামী জাহাজগুলো বাংলাদেশে নিবন্ধিত হওয়ায় বাংলাদেশের পতাকা ব্যবহার করার বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। এতে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদাও বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের শুরু পর্যন্ত বাংলাদেশি পতাকা বহন করতো সমুদ্রগামী ৪৩টি জাহাজ। বর্তমানে বাংলাদেশী পতাকাবাহী বিদেশগামী জাহাজের সংখ্যা ৯১টি। এতে বিদেশের মাটিতে যেমন উজ্জ্বল হচ্ছে দেশের নাম, তেমনি বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়।
নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের পর থেকে খরচ পোষাতে না পেরে অনেক জাহাজ স্ক্র্যাপ (উন্নত ইস্পাত পণ্যের বর্জ্য) হিসেবে বিক্রি করে দেন উদ্যোক্তারা। এরপর বাংলাদেশি পতাকাবাহী ৬৮টি জাহাজ থেকে কমতে কমতে ৪০-এ নেমে আসে। গত ৭/৮ বছর থেকে দেশে মেগাপ্রকল্পের কারণে উন্নয়ন উপকরণ কিংবা কাঁচামাল আমদানি বেড়ে যায় কয়েকগুণ। যে কারণে পণ্য পরিবহনের জন্য জাহাজ সংগ্রহে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে ওঠেন বড় বড় শিল্প উদ্যোক্তারা। তারা নিজেদের প্রয়োজনে সংগ্রহ করেছে বড় বড় জাহাজ।
নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের পতাকাবাহী ৯১টি জাহাজ বিভিন্ন পণ্যসহ গ্যাস, তেল পরিবহন করে আসছে। একেকটি জাহাজ ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহনে সক্ষম। এর মধ্যে আটটি রয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন। বর্তমানে বাংলাদেশি পতাকাবাহী বিদেশগামী এসব জাহাজে তিন হাজারের মতো নাবিক বিভিন্ন পদে কর্মরত রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কনটেইনার নিয়ে জাহাজ চীন, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, ইতালি, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কার কলম্বো, মালয়েশিয়া, স্পেন যাচ্ছে। এসব রুটে ২৫ কোম্পানির ৮৫টি জাহাজের দেড় লাখ কনটেইনার বহনের সক্ষমতা রয়েছে।
একাধিক ব্যবসায়ী জানায়, বিশ্বে এখন শিপিং খরচ বেড়ে গেছে। বুকিং দিয়েও জাহাজ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে লিড টাইম বেড়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিপিং কস্ট ও লিড টাইম কমিয়ে আনতে ইউরোপের সঙ্গে সরাসরি সমুদ্রপথে সংযোগ চালু করেছে বাংলাদেশ।
জেএন/এফও/কেকে