পুরো দেশ এখন সাফজয়ীসাফজয়ী নারী ফুটবলারদের নিয়ে মাতোয়ারা। আনন্দে ভাসছে পুরো দেশ। তবে এর মধ্যেই অভিযোগ উঠল, কাবাডির ছাত্রীদের কয়েকজনকে বকাঝকার পাশাপাশি চুল ধরে টানাটানি করা হয়েছে। তারা সকলেই চট্টগ্রামের ইয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। ফ্রেঞ্চ স্টাইলে বেণী করার কারণে তাদের সাথে এমনটা করেছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নিপা।
এদিকে একই স্কুলের শরীরচর্চার শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন নিজ ছাত্রীদের সাথে এমন ন্যাক্কার জনক ঘটনার প্রতিবাদে নিজের মাথার সব চুল কেটে ফেলেছেন ।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন গণমাধ্যমকে বলেন, থানা পর্যায়ের গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ৮ সেপ্টেম্বর কাবাডি ম্যাচ ছিল। কাবাডির নিয়ম অনুযায়ী চুলে ক্লিপ লাগানো যায় না। খেলতে অসুবিধা হওয়ায় তারা ফ্রেঞ্চ স্টাইলে বেণী করে।
তিনি বলেন, (৭ সেপ্টেম্বর) কাবাডি দলের ছবি তোলার কথা ছিল। পরীক্ষা শেষে ছবি তোলার জন্য ছাত্রীদের জার্সি পরে তৈরি হতে বলি। তারা বেণী করে জার্সি পরে তৈরি হয়। এর মধ্যে আমি টয়লেটে যাই। এসে শুনি প্রধান শিক্ষিকা ছাত্রীদের বকাঝকা করেছেন। কয়েকজন ছাত্রীকে চুল ধরে মারধর করেছেন। তখন দুই মেয়েকে কান্না করতে দেখি। প্রধান শিক্ষিকাকে জানাই যে, আমি ছাত্রীদের বেণী করতে বলেছি। এ কথা শুনে তিনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। পরে ছাত্রীদের সান্ত্বনা দিই।
তিনি আরও বলেন, প্রধান শিক্ষিকার কারণে পরের দিন ম্যাচে অংশ নিতে দেরি হয়। ৮ সেপ্টেম্বর মডেল টেস্ট ছিল। প্রধান শিক্ষিকা পরীক্ষা শেষ করে খেলতে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু মাঠে পৌঁছাতে ৩৫ মিনিট দেরি হয়। গিয়ে শুনি প্রতিপক্ষ দল ওয়াকওভার পেয়ে গেছে।
জাহিদা জানান শিক্ষার্থীদের বকা, অপমান ও চুল ধরে টানাটানির প্রতিবাদে ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি মাথা ন্যাড়া করেন। অতঃপর ২২ সেপ্টেম্বর তিনি ফেসবুকে পোস্ট দেন।
জাহিদা পারভীন অভিযোগ করে বলেন, খেলার জন্য মেয়েদের নিয়ে কোনো টিম করতে চাইলে স্কুল কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়। স্কাউট করতেও দেওয়া হয় না। আর চুল ন্যাড়া করার পর তাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ বারবার হুমকি দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার স্কুলে গেলে কর্তৃপক্ষ তাকে প্রবেশ করতে দেয়নি। মাথা ন্যাড়া করার কারণে জোর করে তাকে পদত্যাগ করানো হয়েছে।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী গণমাধ্যমের কাছে বলেন, ছাত্রীদেরকে বকাবকি বা মারধর করিনি। তাদের সঙ্গে আমি স্বাভাবিকভাবে ছবি তুলেছি। ছবি তোলার আগে তাদের বলেছিলাম, এভাবে (ফ্রেঞ্চ স্টাইলে) বেণী করলে তো হবে না। স্কুলে সবসময় যে বেণী করে আসো, সেভাবে করো। শুধু এটুকু বলেছি। এখানে মারামারি বা বকাঝকার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তিনি বলেন, পরীক্ষা দিতে আমি ছাত্রীদের বাধ্য করিনি। আমি শিক্ষিকাকে (জাহিদাকে) বলেছিলাম মডেল টেস্ট না দিলে কিছু হবে না। কিন্তু তিনি বলেছেন, ছাত্রীরা পরীক্ষা দিক, তিনি কো-অর্ডিনেটরকে বলে রেখেছেন যেতে কিছুটা দেরি হবে।
জাহিদার পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কোনো ধরনের চাপ দিইনি। বরং তিনি শিক্ষাদানের যোগ্য নন উল্লেখ করে আরও সাত-আটদিন আগে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তাকে স্কুলে ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়টিও মিথ্যা। স্কুলে সিসিটিভির ফুটেজ আছে, তাতে সব কিছু আছে।
এব্যাপারে কোতোয়ালি থানা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হুদা ছিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেভাবে বলবে সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে।
জেএন/কেকে