ছাত্রজীবনে চার বছর ট্রেনে বিনা টিকিটে যাতায়াত করে কলেজ করেছেন নওশের আলী। কখনো টাকা না থাকার কারণে, আবার কখনো দ্রুত ট্রেন ধরার জন্য টিকিট কাটা হয়নি। ওই চার বছরের ট্রেনের টিকিটের টাকা বৃদ্ধ বয়সে পরিশোধ করলেন রাজবাড়ীর
বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বাজার বেতেঙ্গা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নওশের আলী শেখ (৭০)।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজবাড়ী স্টেশনের স্টেশন মাস্টার তন্ময় কুমার দত্তের হাতে তিনি পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে দায় মুক্তি নেন। অবশ্য এখন এই ভাড়া পাচ গুণ হয়েছে বলে রাজবাড়ী রেলষ্ট্রশন মাস্টার তন্ময় কুমার জানান।
জানা যায়, নওশের আলীর বাড়ী রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের চর বেতেঙ্গা গ্রামে। তিনি ১৯৬৯ সালে গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। এরপর এইচএসসিতে ভর্তি হন রাজবাড়ী সরকারি কলেজে। সেখান থেকে ১৯৭১ সালে এইচএসসি পাস করে একই কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হন। এরপর ১৯৭৩ সালে রাজবাড়ী কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন।
নওশের আলী ছাত্র জীবনের চার বছর বাড়ি থেকে ট্রেনে এসে রাজবাড়ী কলেজে ক্লাস করতেন। তখন বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়তেন। এরপর ১৯৭৫ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদ থেকে ২০১০ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
নওশের আলী বলেন, ছাত্র থাকার সময় যে কয়েক দিন কলেজে এসেছি সব দিনই বিনা টিকিটে এসেছি। হঠাৎ আমার মনে হলো, ছাত্র থাকার সময় পকেটে পয়সা ছিল না। কিন্তু এখন আমার টাকা আছে। তাই বিবেকের দংশন থেকে ওই টিকিটের টাকা পরিশোধের চিন্তা মাথায় আসে।
এজন্য শনিবার দুপুরে গিয়ে স্টেশন মাস্টারের কাছে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে তাদের কাছ থেকে দায়মুক্তি নিয়ে এসেছি। কারণ সব সময় আমার এই বিনা টিকিটে ট্রেনে কলেজ করার কথা মনে হতো।
নওশের আলীর সহকর্মীরা বলেন, নওশের আলী যখন ছাত্র ছিলেন তখন ট্রেন ছিল এ অঞ্চলের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। ফলে ট্রেনে যাতায়াত করলেও পকেটে টাকা থাকত না টিকিট কাটার। তবে নওশের আলী এটা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বলা যায়। তার জন্য আমরা গর্ব করছি।
রাজবাড়ী স্টেশনের স্টেশন মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত বলেন, নওশের সাহেব এসে জানালেন, ছাত্র জীবনে তিনি বিনা টিকিটে ট্রেন কলেজ করতেন। ওই টাকা এখন দিতে চান। তিনি পাঁচ হাজার টাকা দেন। আমরা নওশের সাহেবকে পাঁচ হাজার টাকার টিকিট কেটে দিয়েছি।
জেএন/কেকে