সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপূজা। সারাবছর যে যেখানেই থাকুন না কেন, এই সময়টায় স্বজনদের নিয়ে পুজোর আনন্দ ভাগ করে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকেই।
আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, প্যান্ডেল হপিং, পুজোর আগে শপিংয়ের উত্তেজনা আর সবশেষে বিসর্জনের মন খারাপ-বাঙালি মজে আছে এই কার্নিভালেই।
নির্ঘণ্ট অনুযায়ী আজ রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) মহালয়া। দুর্গাপূজার মহালয়ার দিনটি খুবই স্পেশ্যাল এই দিন থেকেই পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের শুভ সূচনা হয়।
পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্য তর্পণ করা হয়। মা দুর্গার চক্ষুদানও হয় এই দিনেই। অর্থাৎ দেবীপক্ষ শুরু হচ্ছে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকেই। আগামী শুক্রবার ৩০ সেপ্টেম্বর মহাপঞ্চমী, শনিবার ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী। এই দিনেই হবে মায়ের বোধন, আমন্ত্রণ এবং চক্ষুদান।
২ অক্টোবর সপ্তমী। অষ্টমী পড়েছে সোমবার ৩ অক্টোবর। ৪ অক্টোবর মহানবমী। নবমী নিশি পোহাতেই বেজে উঠবে বিষাদের সুর। বিজয়া দশমী পড়েছে ৫ অক্টোবর, সেদিন বুধবার। অর্থাৎ মায়ের গমন বুধবারে।
এবার জেনে নিই, দুর্গো পূজার শুভারম্ভ আজ মহালয়া দিনটির তাৎপর্য : মহালয়া থেকেই মোটামুটি পুজোর আবহের শুরু। বাঙালির আবহমান সংস্কৃতিতে রেডিয়োতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় চণ্ডীপাঠ শুনতে পাওয়া মানেই মনের ভিতরে পুজোর আয়োজন শুরু। কাগজে কলমে মহালয়া হল পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণ।
ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী অমাবস্যা র্পযন্ত (যা আশ্বিনে এসে পৌঁছয়) সময়কে পিতৃপক্ষ বলে। পুরাণমতে, ব্রহ্মার নির্দেশে পিতৃপুরুষরা এই ১৫ দিন মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসেন। এই সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে তাই কিছু অর্পণ করার রীতি।
লোকবিশ্বাস, এই সময়ে আত্মাদের উদ্দেশ্যে কিছু অর্পণ করা হলে তা সহজেই তাঁদের কাছে পৌঁছয়। এই বিশ্বাস থেকেই গোটা (পিতৃ)পক্ষকাল ধরে পিতৃপুরুষদের স্মরণ করা হয়, তর্পণ করা হয়। যার চূড়ান্ত দিন বা মহা লগ্নটি হল এই মহালয়া।
অনেকেই এই দিনটিকে দেবীপক্ষের সূচনা বলে থাকেন। মহালয়া পিতৃপক্ষের শেষ দিন। পরের দিন শুক্লা প্রতিপদে দেবীপক্ষের সূচনা। সেই দিন থেকে কোজাগরী পূর্ণিমা পর্যন্ত ১৫ দিন হল দেবীপক্ষ।
শাস্ত্রমতে, মহালয়া হল একটি অমাবস্যা তিথি, এ তিথিতে সাধারণত পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ-তর্পণ করা হয়। এ দিন তর্পণ করলে পিতৃপুরুষরা নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পান বলে বিশ্বাস। তাঁরা এই প্রাপ্তিতে আমাদের আশীর্বাদও করেন।
এছাড়া মহালয়ার দিনে অনেক জায়গায় দেবী দুর্গার বোধনও হয়। ‘বোধন’ অর্থে জাগরণ। মহালয়ার পরে দেবীপক্ষের তথা মাতৃপক্ষের তথা শুক্লপক্ষের প্রতিপদে ঘট বসিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার সুচনা করা হয়।
শ্রাবণ থেকে পৌষ– এই ছ’মাস দক্ষিণায়ন। ‘দক্ষিণায়ন’ দেবতাদের ঘুমের সময়। তাই বোধন করে দেবতাদের সেই ঘুম থেকে জাগানো হয়।
মহালয়ার পরে প্রতিপদে যে-বোধন হয় সে সময় সংকল্প করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা চলে। একে বলে কল্পারম্ভ। যদিও ষষ্ঠী থেকে পুজোর প্রধান ক্রিয়াকর্ম শুরু হয়। তাই বলা হয় ষষ্ঠ্যাদিকল্পারম্ভ।
সপ্তমী থেকে বিগ্রহতে পুজো। প্রতিপদ থেকে শুধু ঘটে পুজো চলে। সঙ্গে চণ্ডীপাঠ। বলা হয়, মহালয়ার দিনেই দেবীদুর্গা দেবতাদের কাছ থেকে মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
বরাবরের মতো এবারও কোথাও থিম পুজো তো কোথাও সাবেক পুজো – শহর বা শহরাঞ্চল, গাঁ গঞ্জ এক কথায় এই উৎসব নিয়ে বাঙালির উৎসাহের কোনও অন্ত নেই।
তবে ২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনার চোখ রাঙানির জন্য সেভাবে মানুষ পুজোর দিন উপভোগ করতে পারেনি। বহু পুজো হয়েছে শুধুই রীতি মেনে, কোনও জাঁকজমক ছাড়া।
ফলে এ বছর করোনা গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও মানুষের মধ্যে পুজো নিয়ে মানুষের আবেগ, উন্মাদনা অনেকটাই বেশি। দু’বছর পুজো হয়েছে নামমাত্র। ফলে এ বারে কমর বেঁধে নেমে পড়েছে পুজো কমিটিগুলি।
জেএন/পিআর