পঞ্চগড়ের বোদায় করতোয়া নদীতে একের পর এক ভেসে উঠছে লাশ। নদী পাড় জুড়ে আহজারি আর স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে পরিবেশ। এখনও স্বজনদের খোঁজে আর্তনাদে বুক ফাটাচ্ছে কেউ কেউ।
নৌকাডুবির ঘটনায় তৃতীয় দিনে আরও ১৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এ নদী থেকে। ফলে সর্বশেষ তথ্যমতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ জনে।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দিনাজপুরের খানসামা ও বীরগঞ্জ এবং পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বোদার বিভিন্ন নদী থেকে এসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মৃতদের মধ্যে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ৪৪ জন, আটোয়ারীর ২ জন, দেবীগঞ্জের ১৮ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ জন ও পঞ্চগড় সদরের একজন রয়েছেন। মৃত ৬৮ জনের মধ্যে পুরুষ ১৭ জন ও নারী ৩০ জন। বাকি ২১ জন শিশু।
জেলা প্রশাসনের জরুরি তথ্য কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৬৮ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে কতজন যাত্রী ছিল, তার সঠিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তবে এখনও চারজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এখন পর্যন্ত যারা নিখোঁজ রয়েছেন তারা হলেন— বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের খালপাড়া গ্রামের হিমালয় বর্মন, সাকোয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সুরেন, দেবীগঞ্জ উপজেলার ছত্রশিকারপুর এলাকার ভূপেন এবং পঞ্চগড় সদরের ঘাটিয়ারপাড়া এলাকার জয়া রাণী।
নিখোঁজদের উদ্ধারে কাজ করছে পঞ্চগড়সহ আশপাশের জেলার ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট। এ ছাড়াও রংপুর, কুড়িগ্রাম ও রাজশাহী থেকে আসা তিনটি দলের নয়জন ডুবুরি উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন। আলো থাকা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মঞ্জিল হক জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। বিকেল ৬টা পর্যন্ত ১৮টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পযর্ন্ত ৬৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৮ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। মরদেহগুলো শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে গেল ২৫ সেপ্টেম্বর রবিবার শারদীয় দুর্গোৎসবের মহালয়া উপলক্ষে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া আউলিয়া ঘাট থেকে শতাধিক মানুষ শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিলেন।
ঘাট থেকে নৌকাটি কিছু দূর যাওয়ার পর দুলতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ডুবে যায়। পরে উদ্ধার অভিযান শুরু করে প্রশাসন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপরপাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়।
রবিবার দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মালম্বীরা নৌকা যোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে ৫০ থেকে ৬০ জনের ধারণ ক্ষমতার নৌকায় দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝে গিয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়।
ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায়কে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। আজকে (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতের মধ্যে এই কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় জানান, নিহত প্রত্যেক পরিবারকে মরদেহ সৎকারের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।
জেএন/পিআর