শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপদ আবাসনসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত চট্টগ্রামের বস্তির শিশুরা। মাদকদ্রব্য বিকিকিনিতেও জড়িয়ে পড়ছে তারা। নারী শিশুরা যৌন হেনস্তার শিকার হয় প্রতিনিয়ত। অপুষ্টিতে ভোগা বস্তির শিশুরা অকালে ঝড়ে পড়ার সংখ্যাও খুব কম নয়।
শহরে বস্তিবাসী শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার নানা উদ্যেগ নিলেন তা কাগজে কলমে থেকে যায়।
শহর উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাদের কথা আলাদাভাবে বলা হয় না। নগরের দরিদ্র শিশুদের নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের মতে,বস্তিবাসী শিশুরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য,নিরাপদ
আবাসনসহ বিভিন্ন মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তাদের মৃত্যুর হার শহরের সার্বিক হারের চেয়ে ৭৯ শতাংশ বেশি।
বস্তি এলাকার শিশুদের জীবন খুবই কঠিন এবং অনেক সময় বিপদের মুখোমুখি হতে হয় তাদের। এদের মধ্যে উচ্চ হারে অপুষ্টি, স্কুল থেকে ঝরে পড়া, বাল্য বিয়ে, শিশু শ্রম ও হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে।
২০১৬ সালে পরিচালিত ‘চাইল্ড ওয়েল বিং সার্ভে’ এবং এমআইসিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, বস্তির শিশুদের অবস্থা গ্রামের শিশুদের চেয়ে অনেক খারাপ। বস্তিগুলোতে অবকাঠামো ও সেবার ঘাটতি রয়েছে এবং সব সময় সেখানে উচ্ছেদ আতঙ্ক থকে। কেননা বস্তিগুলো গড়ে উঠেছে সাধারণত নিচু এলাকায়। বস্তিতে বসবাসকারী শহরের এই দরিদ্র মানুষগুলো সব সময় বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
বস্তিতে বসবাসকারী পরিবারগুলোর প্রায় ৭৫ শতাংশই এক কক্ষে বসবাস করে।
বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বস্তির শিশুরা নিয়মিত যে খাবার খায়, তার ৮৬ শতাংশে বহু ধরনের ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। এ কারণে বস্তির শিশুরা বারবার ডায়রিয়া, আমাশয়সহ বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। এ জন্য শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
নগর কেন্দ্রীক বস্তিকে কেন্দ্র করে ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইনসহ নানা মাদকদ্রব্য বিক্রি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বস্তিবাসী। মাদক বিক্রেতা বাবা-মায়ের পাল্লায় পড়ে স্কুলগামী শিশুরাও এ কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এমনকি বাবা-মা, সন্তান একসঙ্গে মাদক গ্রহণ করে বলেও বস্তিবাসীরা জানান। মাদকসেবী শিশু-কিশোরদের পাল্লায় পড়ে অন্য শিশুরাও আসক্ত হয়ে পড়ছে। এভাবে একসময় বিদ্যালয়ে যাওয়া ছেড়ে দেয় শিশুরা।
দুটি পরিবারের কথা
মহানগরীর কদমতল রেললাইন বস্তিতে থাকা আসিয়া আকতার নোয়াখালী থেকে ৬ বছর আগে চট্টগ্রামে আসেন। চার ছেলে মেয়ের মধ্যে এক মেয়েকে ১২ বছর বয়সে বিয়ে দিয়েছেন। অন্য তিন সন্তানের কেউ স্কুলে যায় না। দিনে খাবারে খচর হয় ৩০০ টাকা। অথচ স্বামীর আয় দিনে মাত্র ২০০ টাকা। আসিয়া বলেন, ‘পুলাপানরে স্কুলে ভর্তি করতে চাইলে বেতন চায় ৫০০-৮০০ টাকা। সরকারি হাসপাতালে গেলেও বাইরে থেইক্যা ওষুধ কিনতে বলে।
বাকলিয়ার মিয়াখান নগরের বস্তির মরিয়ম বেগমের মেয়ের বয়স সাড়ে ৫ বছর। মেয়েকে ভালোমন্দ খাওয়াতে গেলে প্রয়োজনীয় কিছু একটা কাটছাঁট করতে হয় তাঁকে। চাক্তাই খালের ওপরে মরিয়মের বাঁশ ও কাঠের ছোট ঘরটি। ঘরের একটু দূরেই কাঁচা পায়খানা। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় হচ্ছে মরিয়মের মেয়ে।
উচ্ছেদের প্রভাব :
বস্তি উচ্ছদের ফলে মানসিক আঘাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন সম্মুখীন হয় শিশুরা। বস্তিবাসীদের নিয়ে কর্মরত ব্যক্তিদের মতে, উচ্ছেদের ফলে বস্তির শিশুরা একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া থেকে ছিটকে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের কথা :
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামসহ একাধিক এনজিও কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদসহ বিভিন্ন নীতি ও সনদে নগরের দরিদ্র শিশুদের উন্নয়নে অঙ্গীকার করেছে। তবে তার বাস্তবায়ন ততটা নেই। রাষ্ট্রীয় বার্ষিক পরিকল্পনা ও বাজেটে স্পষ্টভাবে না এলে বস্তিবাসী শিশুর উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে না।
জেএন/এফও/এও