জাতীয় ডেস্ক : সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা ভয়াবহভাবে বাড়ছে। দেশে বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ৪০৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭ শিক্ষার্থী, স্কুলের ২১৯, মাদরাসার ৪৪ জন এবং কলেজ পড়ুয়া ৮৪ জন। আত্মহননকারীদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ২৪২ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ১৬২ জন।
আজ শনিবার (৮ অক্টোবর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের ‘মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একাডেমিক চাপের প্রভাব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা’ শীর্ষক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলছেন তারা।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষক ড. এ ওহাব।
এ সময় আরও যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক (অব.) ড. মো. মাহমুদুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ।
ওহাব জানান, শিক্ষার্থীদের ওপর একাডেমিক চাপ তাদের আত্মহত্যার পেছনে কতটুকু দায়ী এবং অন্যান্য কী কী কারণ জড়িত, তা জানার লক্ষ্যেই এ গবেষণা জরিপ পরিচালিত হয়।
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধরন বিবেচনায় জরিপে মোট অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের। এছাড়াও ২৩ দশমিক ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের, ২ দশমিক ২৬ শতাংশ মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং বাকিরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি এবং মাদরাসার।
জরিপে অংশ নেয় ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মাদরাসা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট ১ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থী।
জরিপে দেখা গেছে, মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষাজীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জরিপে মানসিক সুস্থতা বিষয়ক বেশ কয়েকটি নিয়ামক নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাওয়া হলে উত্তরে উঠে আসে উদ্বেগজনক কিছু তথ্য।
মোট অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৭ দশমিক ৯৯ শতাংশই জানিয়েছেন যে তাদের নিজস্ব শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত ভয় ও উদ্বেগ তাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে।
এর পাশাপাশি দৈনন্দিন আচার-আচরণ ও ব্যবহারে পরিবর্তন, যেমন- মন খারাপ হওয়া, হঠাৎ ক্লান্তি আসা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে শিক্ষাজীবনে প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন ৮০ দশমিক ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী।
করোনা পরবর্তী সময়ে ১ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থীন মধ্যে ৪০ জন বা ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।
আত্মহত্যার উপকরণ জোগাড় করেও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। করোনা পরবর্তী সময়ে আত্মহত্যা করার কথা মাথায় এসেছে ৩৪ দশমিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর।
জেএন/পিআর