জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে জাপান যে নাজুক অবস্থায় রয়েছে তা এখন সবারই জানা। ‘রিং অব ফায়ার’ অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় জাপান প্রায়ই ভূমিকম্প, সুনামি এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো ভয়াবহ দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। এ সব কথা মাথায় রেখে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন নির্মাণ করতে যাচ্ছে জাপান।
জাপান জানিয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন, দুবাইয়ের ‘বুর্জ খলিফা’কেও ছাড়িয়ে যাবে জাপানের আকাশচুম্বী অট্টালিকা ‘স্কাই মাইল টাওয়ার’! উচ্চতার দিক থেকে ‘স্কাইল মাইল টাওয়ার’ হবে দুবাইয়ের ‘বুর্জ খলিফা’র দ্বিগুণ এবং প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের পাঁচ গুণ! ২০৪৫ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে এই আকাশচুম্বী অট্টালিকার। ৫,৫৭৭ ফুট উচু স্কাই মাইল টাওয়ারকে টোকিও বে-তে একটি মিনি-সিটি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নেক্সট টোকিও’।
তথ্যমতে দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা’র উচ্চতা ২৭১৬ ফুট (প্রায় অর্ধ-মাইল)। কিন্তু জাপান জানিয়েছে, তাদের নির্মাণাধীন স্কাই মাইল টাওয়ার এই উচ্চতাকেও টেক্কা দেবে! ২০৪৫ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে স্কাই মাইল টাওয়ারের এবং এর উচ্চতা হবে প্রায় এক মাইল! উচ্চাকাঙ্ক্ষী এ প্রজেক্টের পেছনে আছেন স্থপতি কোন পেডারসন ফক্স এবং স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম লেসলি ই. রবার্টসন এসোসিয়েটস। সবচেয়ে বড় কথা তারা শুধুমাত্র একটি কাঠামোর নকশাই করছেন না, বরং এই টাওয়ার হবে এমন একটি মিনি-সিটি (ছোটখাটো শহরের মতো) যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে পারবে।
সবচেয়ে উঁচু অট্টালিকার পাশাপাশি ‘নেক্সট টোকিও’তে থাকবে মনুষ্যনির্মিত, হেক্সাগন আকৃতির কিছু দ্বীপ, যেগুলো জাপানের রাজধানী টোকিওকে বন্যাপ্লাবিত হওয়া থেকে প্রতিরোধ করবে এবং সেখানে আশ্রয় নিতে পারবেন প্রায় ৫০০,০০০ মানুষ। স্পেসএক্স এর প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের তৈরি উচ্চগতিসম্পন্ন ট্রানজিট সিস্টেম, হাইপারলুপের মাধ্যমে তাদেরকে সংযুক্ত করা যাবে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক পোস্ট।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়, নির্মাণাধীন স্কাই মাইল টাওয়ারে রয়েছে আরও অসংখ্য চমক! এ টাওয়ারে বসবাস করতে পারবেন ৫৫,০০০ মানুষ। গতানুগতিক পানির পাম্পের বদলে ভবনের সম্মুখভাগে বাইরের বায়ুমন্ডল থেকে পানি সংগ্রহ করে তা ফিল্টার করে সংরক্ষণ করা হবে এখানে।
আর্কিটেকচারাল ডাইজেস্ট আরও জানিয়েছে, স্কাই মাইল টাওয়ারে থাকবে মাল্টিলেভেল স্কাই লবি, যেখানে ভবনের বাসিন্দারা শপিং সেন্টার, রেস্টুরেন্ট, হোটেল, জিম, লাইব্রেরি ও হেলথ ক্লিনিকের সুবিধা পাবেন। এছাড়া, স্কাই মাইল টাওয়ারে থাকবে ক্যাবল-ফ্রি লিফট যেটি উল্লম্ব ও অনুভূমিকভাবে চলতে পারবে। ভবনের সামনে বাইরের দিকে শিল্প-কৃষি পরিচালনার জন্য জায়গা থাকবে এবং ছাদে বাগান করার সুযোগ থাকবে। সব মিলিয়ে ৪২১ তলা এই ভবনে বাস করতে পারবেন ৫৫,০০০ মানুষ। বলাই বাহুল্য, টোকিওবাসীর জন্য ভবিষ্যতে এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ করে দিবে স্কাই মাইল টাওয়ার এবং আধুনিক-বিলাসী জীবনের আরাম-আয়েশের সব ব্যবস্থাই থাকবে এখানে!
জেএন/এও