প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়ে গেছেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল মন্ত্র হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। এই নীতিমালা অনুসরণ করেই আমরা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সুসম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছি।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবার) সিএমপি সেন্টার অ্যান্ড স্কুল এর পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত রয়েছে বলেই সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন করেছি। এটিকে উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছিলেন।
আমাদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল হলো, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য আরও অনেকদূর যাওয়া।
মুজিববর্ষে সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনরুল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুরকন্যা বলেন, আমরা বলেছি বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা, ভূমিহীন থাকবে না। প্রত্যেকের একটা ঠিকানা হবে।
ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে। সব মানুষ শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা পাবে, উন্নত জীবন পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং প্রতিটি গ্রামই শহরে রূপান্তর হবে। প্রত্যেকে নাগরিক সুবিধা একবারে গ্রামে বসে পাবে। সেইভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলছি।
সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার আদর্শে উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা ও পরিপূর্ণ অনুগত থেকে কঠোর অনুশীলন, পেশাগত দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সময়নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের সেবায় সবসময় নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন।
এই দেশ আমাদের; এই মাতৃভূমি আমাদের। কাজেই এই মাতৃভূমিকে আমরা এমনভাবে গড়ে তুলব বিশ্বে কেউ যেন বাংলাদেশকে হেয় প্রতিপন্ন করতে না পারে। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা চলব।
শান্তিরক্ষা মিশনসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমি চাই আমাদের সেনাবাহিনী বা সশস্ত্রবাহিনী কখনও কোনো দিক থেকে পেছনে থাকবে না।
আধুনিক যত রকম যুদ্ধ সরঞ্জামাদি আছে তার সঙ্গে পরিচিতি যাতে হয়, সেগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমানভাবে তারা যেন চলতে পারে, সেইভাবে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীকে আমরা গড়ে তুলতে চাই।
আধুনিক বিমান, বিমান বিধ্বংসী মিসাইল, ট্যাংকসহ নানা সরঞ্জাম সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, আবহমানকাল থেকে যুদ্ধের ময়দানে জাতীয় পতাকা একটা মর্যাদার প্রতীক। আর পতাকা বহন করার রীতি প্রচলিত আছে। তা ছাড়া প্রত্যেক রেজিমেন্টে যার যার নিজস্ব পতাকা রয়েছে। যেকোনো পতাকা প্রাপ্তি একটা বিরাট সম্মানের ব্যাপার। কাজেই আমি মনে করি যে, এই পতাকার মর্যাদা সবসময় সমুন্নত রাখতে হবে। পতাকার মর্যাদা রক্ষা করা, সেই সঙ্গে সঙ্গে দেশের মর্যাদা রক্ষা করা প্রতিটি সৈনিকের দায়িত্ব।
কাজেই আমি মনে করি যে আমাদের দেশের সেনাবাহিনীর পদাতিক ব্রিগেড ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পদাতিক ব্যাটালিয়নকে মেকানাইজড হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়েছে। আজকে পতাকা উত্তোলন করা হলো, যা অনেক সম্মানের। এ কথাটা সবসময় মনে রাখতে হবে। আমরা চাই, আমাদের দেশটা এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা ও ঝুঁকি মোকাবিলায় এই মেকানাইজড ইউনিটগুলোর সংযোজন একটা নতুন মাত্রা আমাদের জন্য যুক্ত হলো, যা আমাদের দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কাজেই সবাই এর মর্যাদা রেখে এগিয়ে যাবেন।
দেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র রয়েছে বলে সব ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশ আজকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
সিলেট ও নেত্রকোণায় বন্যার সময়ে দুর্গম এলাকাতে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে যাওয়ায় ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
জেএন/পিআর