মোহাম্মদ রফিককে গত রমজান মাসে চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানার মডেল মসজিদ এলাকা থেকে রাত ৯টায় বেশ কিছু ইয়াবাসহ র্যাব আটক করে। বেশ কিছুদিন জেলে থাকার পর সে এখন মুক্ত। এলাকায় সে ইয়াবা রফিক হিসেবে পরিচিত। র্যাবের দেয়া ইয়াবা মামলার আসামি রফিক নিজেকে বাকলিয়া থানা পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচয় দেয়। তার স্ত্রী ছালেহা বাকলিয়া বাস্তুহারা এলাকায় ইয়াবা, মাদকদ্রব্য, গাঁজা বিক্রি করেন। সে নিজেকে কর্ণফুলী থানার সোর্স পরিচয় দিয়ে চলেন। বাকলিয়ার বাস্তুহারা এলাকায় প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে চলছে মাদকের কারবার। ফলে তাদের বাঁধা দিতে ভয় পাচ্ছেন সাধারণ লোকজন। নির্বিঘ্নে চলা মাদক কারবারের কারণে সন্ধ্যার পর পুরো এলাকা মাতালের নগরে পরিণত হয়েছে। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় যে কোন ধরণের মাদক।
বাস্তুহারা এলাকায় অন্তত ৩০ জনেরও বেশি মাদক কারবারি রয়েছে। তাদের বেশিভাগ বস্তিতে থেকে মাদক কারবার করলেও বস্তির বাইরে রয়েছে তাদের আরেক জগৎ। প্রায় ইয়াবা ও মাদক কারবারির রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দামি বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স এবং অর্থবিত্ত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, র্যাবের হাতে আটক হওয়া রফিকের আনোয়ারা উপজেলায় রয়েছে দেড় কোটি টাকার বাড়ি। হাটহাজারিতে দোকান, নগরের রাহাত্তারপুলে হাডওয়ারের দোকান। গত ১০/১২ বছর আগেও তিনি রিকশা চালাতেন। তিনি নিজেকে বাকলিয়া থানা পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচয় দেন নিজেকে। সম্প্রতি তার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, র্যাব সদস্যরা আমাকে অন্যায়ভাবে ধরে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। আমি ইয়াবা কারবারে জড়িত নই। তবে, তার স্ত্রী পরিচয় দেওয়া ছালেহা বেগম বলেন, রফিক এক সময় ইয়াবা কারবারে জড়িত ছিলেন। র্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর জামিনে জেল থেকে বের হয়ে তিনি এ পেশায় আর নেই। ছালেহা নিজেকে কর্ণফুলী থানার সোর্স হিসেবে পরিচয় দেন। জানা গেছে, ছালেহা বাকলিয়া ক্ষেতচর বাস্তুহারা এলাকায় গাঁজা ও ইয়াবা কারবারে জড়িত। প্রতিদিন তার বসতঘরে উঠতি বয়সের যুবকদের আড্ডা থাকে।
ক্ষেতচর বাস্তুহারা বস্তিতে মাদকের কারবারে মোহাম্মদ সেলিম নামের আরেক ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে। এলাকায় তাকে ইয়াবার গুরু বা গুটি ব্যবসায়ী হিসেবে চিনে। তার বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফের ঈদগা চুলাগলি এলাকায় হলেও দীর্ঘদিন ধরে সে বাকলিয়ার বাস্তুহারা বস্তিতে বসবাস করছেন। তার রয়েছে টেকনাফে বাড়ি ও বিপুল সম্পদ। সে-ও নিজেকে পুলিশের সোর্স পরিচয় দেন। তার বাসায় নিয়মিত বসে মাদকের আড্ডা। তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এক সময় মাদক কারবারে জড়িত ছিলাম। এখন এগুলো ছেড়ে দিয়েছি। এলাকায় আরেক মাদক কারবারি রফিকুল আলম মনু। তিনি ক্ষেতচরের খালপাড় এলাকায় অবস্থান নিয়ে ইয়াবা কারবারে জড়িত। ওই এলাকায় অবৈধ একটি নৌঘাট দিয়ে টেকনাফ থেকে ইয়াবা এনে এলাকায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাস্তুহারা ক্ষেতচর এলাকায় আরো কয়েকজন গাঁজা ও মাদক কারবারে জড়িত রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম রফিকুল আলম মনুর স্ত্রী জাহিদা, মাহমুদ, রুবেল, মনছুরের স্ত্রী রেহেনা, মনছুর, মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী হামিদা বেগম, রমিজ আহমদ রুবেলের স্ত্রী সুমি আকতার, জাফর আহমদ ও তার স্ত্রী মিনু আকতার , সঞ্জয়, রিফাত, আব্দুর রহমান। প্রতিদিন ওই এলাকায় প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার মাদক বিকিকিনি হয়। মাদকের সহজ লভ্যতার কারণে চট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ মাদকসেবীর ওই এলাকায় যাতাযত রয়েছে।
এলাকার এসব মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকার তিনটি কিশোরগ্যাং ব্যবহার করে। কেউ কোন প্রতিবাদ করলে অস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসে ধমক দেয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বাস্তুহারা ক্ষেতচর এলাকায় ২০ জনের একটি গ্রুপ রয়েছে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ইয়াবা ছাড়াও গাঁজা ও ফেনসিডিল বিক্রি করে আসছে ওই চক্রটি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বাস্তুহারা এলাকার বিভিন্ন স্পটে একাধিক মাদক বিক্রেতা সক্রিয় থাকলেও আনোয়ারার মোহাম্মদ রফিক একক আধিপত্য বিস্তার করে মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে বছরের পর পর বছর। প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা তার মাদকের আখড়ায় নিয়মিত যাতায়ত করে আসছে।
স্থানীয়রা জানায়, থানাকে নিয়মিত মাসহারা দেয় বলে মোহাম্মদ রফিক কোন বাধা ছাড়াই ইয়াবা বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে।
জেএন/এফও/এমআর