জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন ও শেখ রাসেল দিবস-২০২২ উদযাপন উপলক্ষে আজ ১৮ অক্টোবর মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করে।
কর্মসূচীর মধ্যে ছিল-সকাল সাড়ে ৯টায় পরীর পাহাড়স্থ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে শেখ রাসেল চত্ত্বরে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ। শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আশরাফ উদ্দিন, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার এস.এম শফিউল্লাহ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদেও কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহম্মদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরোয়ার কামাল দুলু, মাঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ, জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও জেলা শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ।
বিকেল সাড়ে ৪টায় এম.এ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকায় বেলুন উড়িয়ে শেখ রাসেল দিবসের উদ্বোধন, বর্ণাঢ্য র্যালি, সার্কিট হাউসে শিশুদের নিয়ে কেক কেটে শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিন উদযাপন, রচনা ও চিত্রাঙ্কনসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ। কেক কেটে ও বেলুন উড়িয়ে শেখ রাসেলের জন্মদিন উদযাপন করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন, সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) এম.এ মাসুদ, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস.এম শফিউল্লাহ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহম্মদ ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে.এম সরওয়ার কামাল দুলু।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মোঃ বদিউল আলম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোছাঃ সুমনী আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ মাহমুদ উল্লাহ মারূফ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মোঃ মাসুদ কামাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ আবু রায়হান দোলন, এনডিসি তৌহিদুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাধবী বড়ুয়া, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রিটন কুমার বড়ুয়া, জেলা শিসল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মোঃ মোসলেম উদ্দিন, শিশু একাডেমির জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ নূরুল আবছার ভূঁঞাসহ জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণ, পুলিশ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, জেলা শিল্পকলা ও শিশু একাডেমির প্রশিক্ষক-প্রশিক্ষণার্থীগণ।
আলোচনা সভা শেষে শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন আয়োজিত চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
সবশেষে অনুষ্ঠিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন জেলা শিশু একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণার্থীরা। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
শেখ রাসেল দিবসের অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল। ১৯৬৪ সালের এই দিনে ঢাকার ধানমন্ডিস্থ ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত ৩২ নম্বর বাড়ি বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অর্জিত এ দেশের স্বাধীনতা যারা সহ্য করতে পারেনি তারাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করে। ইতিহাসের এ বর্বরতম ও ন্যাক্কারজনক হত্যাকান্ড থেকে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র ১০ বছর ১০ মাস বয়সী ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলও রেহায় পায়নি। বঙ্গবন্ধুর সাথে নরপিশাচরা তাকেও নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। সে দিন মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাসেলের ছোট্ট বুক বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারী হতো, আমরা মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন নেতা পেতাম। এটা জেনে ঘাতকেরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্য। রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধু মাসের পর মাস, বছরের পর বছর জেলে কাটিয়েছেন। ফলে ছোট্ট শিশু রাসেল পিতৃস্নেহ থেকে ও বঞ্চিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে একটি সংবিধান উপহার দিয়ে গেছেন যে সংবিধান মানবতার কথা বলে। তিনি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ে মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। ১৯৯৬ সালে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কাজ শুরু করেন। খুনীদের অনেকের বিচার হয়েছে, কারও কারও বিচার প্রক্রিয়াধীন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের মধ্যে যারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা এখন শুধু সময়ের দাবী।
জেলা প্রশাসক বলেন, আবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের সংসারে পাঁচ সন্তান ছিল। তাদের মধ্যে শেখ রাসেল ছিল সবার ছোট। ভাই-বোনের মধ্যে অন্যরা হলেন-বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সংগঠক শেখ কামাল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা শেখ জামাল ও শেখ রেহানা। আজ থেকে ৪৮ বছর আগে ঘাতকদের হাতে শিশু শেখ রাসেলের নির্মম মৃত্যু হলেও সে আছে এ দেশের প্রতিটি মানুষের অন্তরে।
মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। যারা দেশের স্বাধীনতা কামনা করেনি তারাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। যে কোন সময় তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
জেএন/এমআর