গত আসরের দুই ফাইনালিষ্ট অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে আজ শুরু হচ্ছে চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্ব। সুপার টুয়েলভে গ্রুপ-১এ জয় দিয়ে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করতে মরিয়া বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও গতবারের রানার্স-আপ নিউজিল্যান্ড। তবে বড় দু:শ্চিন্তার কারণ আবহাওয়া। আবহাওয়ার পুর্বাভাস অনুযায়ী ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেস্তে যাবার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া দপ্তরের ভাষ্য অনুযায়ী ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে বৃষ্টির। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায় শুরু হবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে ৮ উইকেটে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মত সংক্ষিপ্ত ভার্সনের শিরোপা জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথমবার ফাইনালে উঠে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন চুরমার হয় নিউজিল্যান্ডের। ঐ আসরের দুই ফাইনালিস্টদের নিয়ে এবার বিশ্বকাপের মূল লড়াই শুরু হচ্ছে।
গত বিশ্বকাপের পর ১৭টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। যার মধ্যে জয় পেয়েছে ৯টিতে, হার ৬টিতে এবং ১টি ম্যাচ বৃষ্টিতে পন্ড হয়।
বিশ্বকাপের আগ মুর্হূতে তিনটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। এরমধ্যে দু’টিতেই হেরেছে তারা। ভারত সফরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারলেও, ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে অস্ট্রেলিয়া।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে পারলেও, ইংল্যান্ডে কাছে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে হারে অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ড সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে সিরিজ হাতছাড়া করে অসিরা। আর শেষ ম্যাচটি বৃষ্টিতে পন্ড হয়।
বিশ্বকাপে নিজেদের একমাত্র ওয়ার্ম-আপ ম্যাচেও ভারতের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছে অস্ট্রেলিয়া।
তবে শিরোপা ধরে রাখার মিশনে মূল লড়াইয়ে জ্বলে উঠতে চায় অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে ইনজুরির কারণে দলের ব্যাক-আপ উইকেটরক্ষক জশ ইংলিশকে হারায় তারা। তার পরিবর্তে দলের সুযোগ পেয়েছেন অলরাউন্ডার ক্যামেরুন গ্রিন। গলফ খেলতে গিয়ে হাতের ইনজুরিতে পড়ে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যায় ইংলিশের।
বিশ্বকাপের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ঘোষিত দলে চমক হিসেবে আছেন সিঙ্গাপুরে বংশোদ্ভূত টিম ডেভিড। ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে হয়ে ৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ১৫৬ রান করেছেন তিনি।
বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান অস্ত্র হবেন ডেভিড, এমনটা মনে করেন দেশটির অনেক সাবেক ক্রিকেটাররা। ইনিংসের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার ভরসার নাম ডেভিড ওয়ার্নার ও অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। তবে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ম্যাচে হয়তো দেখা যাবে না সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথকে। সম্প্রতি এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি।
মিডল-অর্ডারে অস্ট্রেলিয়ার হাল ধরবেন ম্যাথু ওয়েড,মার্কাস স্টয়নিস-গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা। কিন্তু ম্যাক্সওয়েলের ফর্ম চিন্তায় ফেলেছে অস্ট্রেলিয়াকে। এ বছর ১৪ ইনিংসে কোন হাফ-সেঞ্চুরি নেই ম্যাক্সওয়েলের। সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ৪৮। সর্বশেষ ৭ ইনিংসে ডাবল-ফিগারেই যেতে পারেননি তিনি।
বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাফল্য নির্ভর করছে, টি-টোয়েন্টির এক নম্বর বোলার জশ হ্যাজেলউড-প্যাট কামিন্স-মিচেল স্টার্কের উপর। এই তিন পেসারের সাথে থাকছেন দলের প্রধান স্পিনার এডাম জাম্পা।
সব কিছুর পরও জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর করতে নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত বলে জানালেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ফিঞ্চ। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপের মত টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ সব সময়ই বড় চ্যালেঞ্জিং। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। জয় দিয়ে বিশ্বকাপের শুরুটা করতে পারলে, টুর্নামেন্টের পরের দিকে চাপ অনেকাংশে কমে যায়। আমাদের লক্ষ্য ভালো ক্রিকেট খেলে, সাফল্য নিয়ে ম্যাচ শেষ করা।’
অন্য দিকে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ১৮টি টি-টোয়েন্টি খেলে ১২টিতে জয় এবং ৬টিতে হেরেছে নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপের আগে সর্বশেষ এ মাসেই ঘরের মাঠে বাংলাদেশ-পাকিস্তানকে নিয়ে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে নিউজিল্যান্ড। ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জিততে পারেনি কিউইরা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ড্যারিল মিচেলকে পাচ্ছে না নিউজিল্যান্ড। আঙুলে চিড় ধরায় প্রথম ম্যাচে খেলতে পারবেন না তিনি। আগামাী ২৬ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে পাওয়া যাবে মিচেলকে।
নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপ বড় শক্তি ওপেনার মার্টিন গাপটিল-কেন উইলিয়ামসন-ডেভন কনওয়ে-গ্লেন ফিলিপস। টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে পঞ্চমস্থানে আছেন কনওয়ে।
বোলিংয়ে দুই অভিজ্ঞ টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টের সাথে লুকি ফার্গুসন এডাম মিলনেও আছেন। স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের সাথে আছেন ইশ সোধি।
গত আসরের ফাইনালের মত এবারের প্রথম ম্যাচ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের হওয়াতে রোমাঞ্চিত ব্লাক-ক্যাপস অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। তিনি বলেন, ‘ব্যাপারটা দারুন। গত আসরের দুই ফাইনালিস্ট বিশ্বকাপের মূল পর্ব শুরু করছে। ঐ ম্যাচে দারুন খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ভাগ্য আমাদের সাথে ছিলো না। তবে ঐ ম্যাচ এখন অতীত। আজ মূল পর্বের প্রথম ম্যাচ। আমাদের সকলের ফোকাস সেখানে। প্রতিটি দলই চায় মূল লড়াইয়ে সাফল্য পেতে। আমরাও ব্যতিক্রম নই। জয়ের জন্যই আমরা মাঠে নামবো।’
তবে সব কিছু ছাপিয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের রোমাঞ্চকর ম্যাচে নায়ক হতে পারে বৃষ্টি। সিডনিতে বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে ৯০ শতাংশ। বিশ্বকাপে দু’টির মধ্যে ১টি ওয়ার্ম-আপ ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় নিউজিল্যান্ড। প্রথমটিতে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৯ উইকেটে হারলেও, ভারতের বিপক্ষে শেষটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়।
এখন পর্যন্ত ১৫টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার জয় ১০টিতে, নিউজিল্যান্ডের জয় ৪টিতে। একটি ম্যাচ টাই হয়। সর্বশেষ গত বিশ্বকাপে দেখা হয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের। আসরের ঐ ফাইনালে জয় পেয়েছিলো অসিরা।
অস্ট্রেলিয়া দল : অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), অ্যাস্টন অ্যাগার, প্যাট কামিন্স, টিম ডেভিড, জশ হ্যাজেলউড, ক্যামেরুন গ্রিন, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কেন রিচার্ডসন, স্টিভ স্মিথ, মিচেল স্টার্ক, মার্কুস স্টয়িনিস, ম্যাথু ওয়েড, ডেভিড ওয়ার্নার ও এডাম জাম্পা।
নিউজিল্যান্ড দল : কেইন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), ফিন অ্যালেন, ট্রেন্ট বোল্ট, মাইকেল ব্রেসওয়েল, মার্ক চ্যাপম্যান, ডেভন কনওয়ে, লুকি ফার্গুসন, মার্টিন গাপটিল, এডাম মিলনে, ড্যারেল মিচেল, জিমি নিশাম, গ্লেন ফিলিপস, মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি ও টিম সাউদি।
জেএন/এমআর