সারা দেশে ২০২১ থেকে এ পর্যন্ত ৭০ থেকে ৮০ জন যুবক হিজরতের উদ্দেশে বের হয়েছেন, যারা সবাই উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সদস্য। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বুধবার রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আসনার হিন্দাল শারক্কিয়ার পাঁচজন সদস্যদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—আব্দুল্লাহ, তাজুল ইসলাম, জিয়াউদ্দিন, হাবিবুল্লাহ ও মাহমুদুল হাসান। তাদের কাছ থেকে তিনটি মুঠোফোন এবং ফতোয়া সংক্রান্ত ১২ পাতা কাগজ জব্দ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় একটি মামলা হয়।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সম্প্রতি কুমিল্লা জেলা থেকে সাতজন তরুণ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হলে সিটিটিসি ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লা থেকে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া আবরারুল হককে সনাক্ত করে মগবাজার এলাকা থেকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর আটক করা হয়।
আবরারুল হকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেশব্যাপী নিখোঁজের চাঞ্চল্যকর ঘটনার সঙ্গে জড়িত সংগঠনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালীর বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তীতে রামপুরার হাজীপাড়া এলাকা থেকে ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালীকে আটক করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার হওয়া ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালী সংগঠনের দাওয়াহ বিভাগের প্রধান। তিনি সংগঠনের দাওয়াতি বিভাগে কাজ করতেন এবং পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের সময় কোনো জঙ্গি সদস্য অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা করতেন। কোনো সদস্য হামলার শিকার হলে প্রাথমিক চিকিৎসা কীভাবে করতে হবে সে বিষয়েও প্রশিক্ষণ দিতেন। সমতলে থাকাকালে জঙ্গি সদস্য প্রশিক্ষণ গ্রহণের সময় অসুস্থ হলে তার সঙ্গে গোপন চ্যাটে আলাপ করে চিকিৎসা নিতেন। ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালী পাহাড়ি ক্যাম্পে এক মাসের অধিককাল অবস্থান করেন। মাসে একবার তিনি পাহাড়ি ক্যাম্প পরিদর্শন করতেন। ক্যাম্পে তিনভাগে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। প্রথম ভাগে পাহাড়ের ক্যাম্পে শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। দ্বিতীয়ভাগে যুদ্ধ কৌশল, যেখানে ডামি অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। তৃতীয় ধাপে পেট্রোলিং শেখানো হতো।’
ডিএমপির সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই সংগঠনের উদ্দেশ মূলত জঙ্গিবাদের জন্য সদস্য রিক্রুটমেন্ট, অর্থ সংগ্রহ, সশস্ত্র সামরিক ট্রেনিং, আধুনিক অস্ত্র ক্রয়সহ বিশাল জঙ্গি বাহিনী গঠন করা। উদ্দেশ পূরণে তারা দেশব্যাপী ২০২১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ৭০ থেকে ৮০ জন যুবককে এই সংগঠনের সদস্য করেছেন। সংগঠনের উদ্দেশ ছিল পাহাড়ে তাদের শক্ত অবস্থান তৈরি, নিরাপদ সামরিক ট্রেনিং, সংগঠনের উগ্রবাদী উদ্দেশ বাস্তবায়নে দেশে নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে পুনরায় নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যাওয়া।’
জেএন/এমআর