দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনও প্রায় ১৫ মাস বাকি। তাই জনদৃষ্টি আকর্ষণ করতে দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শক্তি প্রদর্শনের মহড়া শুরু হয়ে গেছে।
বহুদিন পরে হলেও রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করতে চায় বিএনপি। তার আগে অন্য ৯ বিভাগে গণ-সমাবেশ কর্মসূচী পালন করবে দলটি।
ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিতব্য বিএনপির সভা-সমাবেশে লোকসমাগম দেখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন দলটির নেতারা। তাদের দাবি, সমাবেশে বিপুল সমাগম জনসমর্থনের বহিঃপ্রকাশ।
আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ। মহাসমাবেশ সফল করতে সারাদেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঢাকায় জড়ো করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলীয় হাইকমান্ড।
মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির সিনিয়র নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন।
কেউ বলছেন ওইদিনই হবে এ সরকারের শেষ দিন, কেউ বলছেন ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার নির্দেশে, কেউ কেউ বলছেন ১০ ডিসেম্বরের কথা শুনে আওয়ামী লীগ ভয় পাচ্ছে, আবার কেউ বলছেন ১০ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াও মহাসমাবেশে উপস্থিত থাকতে পারেন।
এদিকে বিএনপি ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছে মন্তব্য করে এসব হুঁশিয়ারি উচ্চারণের পাল্টা জবাব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতারাও।
বিএনপি নেতাদের হুঁশিয়ার করে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, কর্মসূচীর নামে রাজপথে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। এভাবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কারণে দেশের রাজনীতিতে এখন উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির সমাবেশে লোকসমাগমের যে শো করা হয়েছে তার পাল্টা জবাবে গেল শনিবার রাজধানী ঢাকায় জনসমাগমের শোডাউন করেছে ক্ষমতাসীনরা। আরো কয়েকটি বড় সমাবেশের ঘোষণা এরই মধ্যে দিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নির্বাচন সামনে রেখে রাজপথ দখলের চেষ্টা করছে। এ কারণে জুলাই মাসের শেষ দিক থেকেই প্রায় ২ মাসের বেশি সময় ধরে দেশব্যাপী লাগাতার কর্মসূচী পালন করেছে দলটি।
তাছাড়া গেল ১২ অক্টোবর থেকে নতুন উদ্যমে ১০ বিভাগে গণ-সমাবেশ কর্মসূচী পালন শুরু করেছে। এর আগে চট্টগ্রাম ও সর্বশেষ রংপুর নিয়ে চতুর্থ বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছে বিএনপি।
নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়া, বিভিন্ন স্থানে গুলিতে দলের নেতাকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে এসব গণসমাবেশ করছে দলটি।
সমাবেশে সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন সরকার গঠনের ডাক দেন দলের নেতারা। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংসদকে বিলুপ্ত করে, সরকারকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তার দায়িত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
ওই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নতুন করে নির্বাচন হবে এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে সবার গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে সরকার গঠন করবে।
গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপিকে বুঝিয়ে দেব জনসমাগম কাকে বলে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজপথ দখলে রাখতে গতকাল শনিবার থেকেই মাঠে নামেন তারা।
মির্জা ফখরুলকে টেলিভিশনে আওয়ামী লীগের সম্মেলন দেখার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, দেখাব, পলোগ্রাউন্ডে দেখাব। সেখানে ১০ লাখ লোকের সমাগম হবে। শেখ হাসিনা যাবেন। আপনারা ১০ লাখ মুখে বলবেন, আমরা বাস্তবে দেখাব।
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আসলে বিএনপি কী করতে চায় এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাদের নানান বার্তা নিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে গুজব। তাই মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায় ১০ ডিসেম্বর কি হবে। আর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয় ১০ ডিসেম্বর কিছুই হবে না।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, ১০ ডিসেম্বর তেমন কিছুই হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, বিএনপির রাজনৈতিক শক্তি এখন অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় দুর্বল। এ ছাড়া সরকার বাধা দিচ্ছে না বলে বিএনপি এখন রাজপথের কর্মসূচী ভালভাবে পালন করতে পারছে।
তবে যখনই সরকার দেখবে বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচী পালনের নামে রাজপথে বিশৃঙ্খলা করবে তখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তা কঠোর হস্তে মোকাবেলা করতে বলবে।
এ ছাড়া সরকারী দল আওয়ামী লীগের রয়েছে বিশাল কর্মীবাহিনী। তারা যখন দেখবে বিএনপি রাজপথ দখলে নিয়ে যেতে পারে তখন তারাও অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টা করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের বছরে এসে মরণকামড় দিতে চাইবে বিএনপি। অন্যদিকে উত্তপ্ত রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
এভাবে আন্দোলন কর্মসূচি চলতে থাকলে বিএনপির নৈরাজ্য বেড়ে যাবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। সরকার তা হতে দিতে পারে না। রাজপথে মোকাবিলার মাধ্যমে বিএনপিকে চাপে রাখতে চায় সরকার।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, পাল্টাপাল্টি সমাবেশের কোনো কর্মসূচির দিকে যাবেন না তারা। তবে সর্বোচ্চ উপস্থিতিতে সমাবেশগুলো করবে দলটি। সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা করলে দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অতিসম্প্রতি বলেছেন, বিএনপির হুমকি-ধমকিকে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না। আওয়ামী লীগের জন্ম রাজপথে।
আওয়ামী লীগ অতীতেও রাজপথে ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বিএনপি কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা করলে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। তাই টেমস নদীর পাড়ে বসে রাজপথ থেকে উঠে আসা দল আওয়ামী লীগকে পরাজিত করার স্বপ্ন দেখে কোন লাভ নেই।
জেএন/পিআর