দিন দুপুরে শ্বশুড় বাড়ির নিজ কক্ষের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে ছিলো ১৮ বছর বয়সী গৃহবধূ সাদিয়া আক্তার। খবর পেয়ে ঝুলে থাকা লাশ উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
আজ সোমবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে মিরসরাই পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের উত্তর আমবাড়িয়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত সাদিয়া সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড কাজীপাড়া এলাকার আলমগীর মেম্বার বাড়ির মো. খান সাবের মেয়ে। মৃত্যুর ঘটনায় সাদিয়ার স্বামী তাজুল ইসলাম রুবেলকে আটক করেছে পুলিশ।
সরজমিনে খোঁজ নিতে গেলে নিহত সাদিয়ার শশুর বাড়ীর প্রতিবেশীরা জানায়, চার বছর আগে মিরসরাই পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের পূর্ব গোভনিয়া আমবাড়িয়া এলাকার সিরাজুল হকের ছেলে তাজুল ইসলাম রুবেলের সাথে সাদিয়া আক্তারের ষ্টাম্পে চুক্তি মোতাবেক ৭ লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয়।
বিয়ের ৪ মাস পর স্বামী রুবেল প্রবাসে চলে যায়। গত ১৫দিন আগে সে ছুটিতে বিদেশ থেকে বাড়িতে আসে। প্রবাস থেকে ফিরে আসার পর তাদের মধ্যে তেমন কোন ঝগড়ার আভাস পাওয়া যায়নি।
সাদিয়ার মা রীনা আক্তার আহাজারী করে জানান, সোমবার সকাল ১১টায় মেয়ের সাথে শেষ কথা হয়। তখন পাশে মেয়ে জামাই তাজুল ইসলাম বসা। তাজুল ইসলামের শেখানো মতে সাদিয়া জানায় ২শ জন বর যাত্রী খাওয়ানো বাবদ ১ লক্ষ টাকা দিতে হবে। অন্যথায় মেয়ের লাশ পাবে।
তিনি মেয়েকে অভয় দিয়ে বলেন, আমি ভাত রান্না করছি ভাত রান্না শেষ করে কিছু টাকার ব্যাবস্থা করে আগামী বুধবার আসবো। সেই পর্যন্ত জামাইকে ধৈর্য্য ধরতে বল। কথা শেষ করে ফোন রাখার ৩০ মিনিট পর খবর আসে মেয়ে আত্মহত্যা করে মারা গেছে।
রীনা আক্তার আরো জানান, বিয়ের সময় মেয়ের বয়স ছিল ১৪ বছর। মেয়েকে দেখে পছন্দ করে তাজুল। কোন কিছু ছাড়াই বিয়ে করতে তদবির করে। তার তদবিরে সকলের মন গলে যায়। বয়স কম হওয়ায় কাবিন ছাড়াই সাদা কাগজে লিখে বিয়ে হয়।
গত চার বছরে মেয়ের জামাই যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছি। এখন মেয়ের বয়স ১৮ পুর্ন হয়েছে জামাইও দেশে আসছে তাই কাবিন নামা করতে বলেছি আমরা। কাবিন করতে নারাজ জামাই।
সে একটি আলমিরা বাবদ ২০ হাজার ও ২শ জন বরযাত্রী খাওয়ার খরচ বাবদ ৮০ হাজার টাকাসহ ১ লক্ষ টাকা দাবি করে। আমরা না করি নাই। আমরা একটু সময় চেয়েছি, টাকা যোগাড় করার জন্য। কিন্তু টাকার জন্য অপেক্ষা করে নাই জামাই মেয়েটাকে মেরে ফেলেছে।
এছাড়া তিনি বলেন আমার মেয়ে আত্মহত্যা করে নাই তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এদিকে স্থানিয়দের মাঝে রটেছে সাদিয়ার স্বামী তাজুল সিঙ্গারার সাথে বিষ মিশিয়ে তাকে হত্যা করেছে।
এ ব্যাপারে জানতে কথা হয়, তাজুলের বাড়ির পাশের ভূঞা স্টোরের মালিক আলমগীর ভূঁইয়ার সাথে। তিনি জানান, সাদিয়ার স্বামী তাজুল ইসলাম সকাল ১১টার দিকে দোকান থেকে ১০ টাকায় ২টি সিঙ্গারা ক্রয় করেন। যদিও তাদের ঘরের সদস্য সংখ্যা ৫ জন।
স্থানিয়রা বলাবলি করছেন তাজুল ওই সিঙ্গারার সাথে কিছু মিশিয়ে সাদিয়াকে খাইয়েছে। এতেই তার মৃত্যু হয়েছে।
তবে মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলেই দাবি করছেন। তিনি জানান, লাশ উদ্ধার পরবর্তী প্রাথমিক সুরতহাল অনুয়ায়ী এটি একটি আত্মহত্যা। বিষক্রিয়ায় লক্ষন ও পাওয়া যায়নি।
ধারণা করছি যৌতুক নিয়ে স্বামী শাশুড়ি ও নিজের মা বাবার যাঁতাকলে পড়ে অভিমানে মেয়েটি আত্মহত্যা করতে পারে।
তবে ময়নাতদন্তের আগে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। গৃহবধুর স্বামী তাজুল ইসলামকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য চমেক মর্গে প্রেরণ করা হবে।
এদিকে তাজুলের বাড়ির মুল ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে তার মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা।
জেএন/এইউ/পিআর