দেশে মজুদ গ্যাসে চলবে আরো ৯ বছর, তারপর..

আজ থেকে ৪০ বছর আগে আশির দশকেও দেশ বিদেশের মহারথীদের মুখে শোনা যেতো ‘বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ভাসছে’। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিপর্যয়ে দেশের জ্বালানি খাত। দেখা দিয়েছে তীব্র গ্যাস সংকট।

- Advertisement -

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জাতীয় সংসদে মো. মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, বর্তমানে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা তিন হাজার সাতশত মিলিয়ন ঘনফুট।

- Advertisement -google news follower

দৈনিক উৎপাদিত গ্যাসের উৎপাদন দুই হাজার ৫শ ৭০ মিলিয়ন ঘটনফুট এবং আমদানি করা দৈনিক ৫শ ৯০ মিলিয়ন ঘনফুট সমপরিমাণ এলএনজি মিলিয়ে বর্তমানে দেশে দৈনিক ৩ হাজার ১শ ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।

এ হিসাবে দৈনিক ঘাটতি রয়েছে ৫শ ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে ঘাটতি পূরণের জন্য অনশোর গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বৃদ্ধির বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

- Advertisement -islamibank

এ ছাড়া দৈনিক ১শ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ল্যাল্ড বেইসড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ফ্যাসিবিলিটি স্টাডি ও টার্মিনাল ডেভেলপারস সিলেকশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশে গ্যাসের মজুদ ও তা কতদিন চলবে এ সংক্রান্ত একটি ধারণা উঠে এসেছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে। সেখানে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশে গ্যাসের মজুদ আসলে কত আছে? আর সে গ্যাস দিয়ে কতদিন চলা সম্ভব হবে?

গ্যাসের মজুদ কতটা আছে?

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকার্বন ইউনিটের মহাপরিচালক আবুল খায়ের মোহাম্মদ আমিনুর রহমান বিবিসিকে বলেছেন, এই মুহূর্তে দেশে আবিষ্কৃত গ্যাসের পরিমাণ মোট ২৮ ট্রিলিয়ন ঘনফুট বা টিসিএফের চাইতে কিছু বেশি।

তিনি বলেন, আবিষ্কৃত ২৮ টিসিএফের মধ্যে ১৯৬৫ সালে আবিষ্কার হওয়া গ্যাসও আছে। কিন্তু যেহেতু প্রতিদিনই আমরা গ্যাস খরচ করছি, সে কারণে খরচ হওয়া অংশ বাদ, আমাদের মজুদের পরিমাণ নয় দশমিক শূন্য ছয় টিসিএফ।

আবিষ্কৃত গ্যাসের পরিমাণ নির্ধারণের বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, কূপ খনন করার পর সিসমিক জরিপের ফল এবং সেখানকার গ্যাসের চাপের ওপর নির্ভর করে ওই কূপে গ্যাসের মোট পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।

আবিষ্কৃত গ্যাসের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে মূলত তিন ধরনের মজুদ হিসাব হয়- প্রমাণিত মজুদ, উত্তোলনযোগ্য মজুদ ও সম্ভাব্য মজুদ।

সরকারি যে প্রতিষ্ঠানটি খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন, পরিশোধন ও বাজারজাত করার কাজ করে সেই পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে দেয়া ২০২২ সালের জুলাই মাসের তথ্য বলছে, দেশে প্রমাণিত, উত্তোলনযোগ্য আর সম্ভাব্য মিলে মোট মজুদের পরিমাণ ৩০ দশমিক ১৩ টিসিএফ।

এর মধ্যে আবিষ্কৃত ২৮ টিসিএফ গ্যাসের মধ্যে এ পর্যন্ত ব্যবহার করা প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ সাড়ে ১৯ টিসিএফের বেশি।

পেট্রোবাংলার ৩০ অক্টোবরের দৈনিক গ্যাস উৎপাদন রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ২৮টি গ্যাসক্ষেত্রে মোট ৭০টি কূপ রয়েছে, এর মধ্যে ৬৯টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।

এর মধ্যে দেশি প্রতিষ্ঠান বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড বিজিএফসিএল এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড এসজিএফএল গ্যাস উত্তোলন করছে।

এর বাইরে দুটি বহুজাতিক তেল কোম্পানি বা আইওসি শেভরন ও তাল্লো চারটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদন করছে।

তবে এ বছরই বঙ্গোপসাগরের মহীসোপান এলাকায় বিপুল গ্যাসের মজুদের যে সম্ভাবনার তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিয়েছে, তা এখন পর্যন্ত মজুদের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এদিকে, গ্যাস কূপগুলো থেকে প্রতিবছরই উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ কমছে।

হাইড্রোকার্বন ইউনিটের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে দেশে প্রতিদিন ২৬৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হতো, যা ২০২১ সালে এসে ২৩৫২ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে যায়।

গ্যাসের বর্তমান মজুদ দিয়ে কতদিন চলা যাবে?

হাইড্রোকার্বন ইউনিটের মহাপরিচালক রহমান বলেছেন, বর্তমানে যে মজুদ আছে তা দিয়ে আগামী নয় বছর চলা যাবে।

‘মানে যদি নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্র থেকে আর গ্যাস না পাওয়া যায়, তাহলে এই মজুদ দিয়ে আরো নয় বছর চলা যাবে। কিন্তু আগামী নয় বছরের মধ্যে নতুন গ্যাস উত্তোলন হবে না বা নতুন মজুদ বাড়বে না, অতটা নৈরাশ্যবাদী আমরা নই, আর সে আশঙ্কাও নাই।’

তিনি বলেন, প্রতিবছরই নতুন কূপ যুক্ত হচ্ছে। এই মুহূর্তে বাপেক্সের মাধ্যমে নতুন গ্যাসক্ষেত্রের অনুসন্ধান চলছে। এবং এখন বাপেক্স ভোলা এবং সিলেট অঞ্চলে মোট ছয়টি নতুন কূপ খননের কাজ করছে বলে তিনি জানিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে বছরে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস ব্যবহার হয়।

বাংলাদেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৩ হাজার ৪শ মিলিয়ন ঘনফুট, কিন্তু উৎপাদন হয় ২ হাজার ৩শ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসের মোট উৎপাদনের ৪০ শতাংশ যায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পেছনে।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM