খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো ও প্রক্রিয়াজাতকরণে যুবসমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আগামীতে যে দুর্ভিক্ষের অবস্থা তৈরি হতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে, তা মোকাবিলায় দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো ও প্রক্রিয়াজাতকরণে যুবসমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

- Advertisement -

পৃথিবীর অনেক দেশ বয়োবৃদ্ধ দেশে পরিণত হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশেকে নিয়ে যেতে হবে অভীষ্ট লক্ষ্যে।

- Advertisement -google news follower

ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) জাতীয় যুব দিবস-২০২২ এর উদ্বোধন এবং ‘জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে তিনি ভার্চুয়ালে অংশগ্রহণ করেন। মূল অনুষ্ঠানটি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। ‘প্রশিক্ষিত যুব উন্নত দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে এবারের জাতীয় যুব দিবস।

- Advertisement -islamibank

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বর্তমান অবস্থার কথা বিবেচনা করে, অর্থাৎ কোভিড-১৯-এর যে অভিঘাত, সে করোনাভাইরাসের কারণে আজকে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, তার ওপর ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ফলে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত। সেই ক্ষেত্রে আমাদের দেশে যেহেতু যুবসমাজ অত্যন্ত শক্তিশালী, তাদেরকে আমি আহ্বান করব, আজকে বিভিন্ন সংস্থাও বলছে, সারা বিশ্বব্যাপী আগামীতে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। খাদ্যভাব দেখা দেবে। অনেক উন্নত দেশ, সেখানেও কিন্তু এ ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজমান।

তিনি আরও বলেন, সেই অবস্থায় আমাদের বাংলাদেশটাকে আমাদের এর থেকে মুক্ত রাখতে হলে আমাদেরও প্রতি ইঞ্চি জমিতে যেমন আবাদ করতে হবে, তা ছাড়া খাদ্যপণ্য উৎপাদন করা, প্রক্রিয়াজাত করা- তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আমি আমাদের যুবসমাজকে আহ্বান করব তারা যেন আরও উদ্যোগ নেয়।

নিজ নিজ এলাকায় উদ্যোগ নিতে যুবকদের প্রতি পরামর্শ রেখে সরকারপ্রধান বলেন, খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত করা- সেটা আমরা যেমন আমাদের দেশের চাহিদা মেটাতে পারব, আবার অনেক দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশকে আমরা সহযোগিতাও করতে পারব। কেননা, আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আর আমাদের সবেচেয়ে বড় কথা যে আমাদের জনশক্তি, এই জনশক্তিটাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে এদেশে লাখো মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে যুবকরা জাতির পিতা ডাকে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযোদ্ধে অংশ নিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনাকালীন আমি দেখেছি, চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে যুবকরাই সব কাজে এগিয়ে এসেছে। এটা কিন্তু গর্বের বিষয়। নতুন নতুন আবিষ্কারে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এটা আমাদের যুবকরাই করবে। আমাদের যুবকরা এতো বেশি মেধাবী, তারা সব কাজে অবদান রাখতে পারবে।

স্বাধীনতাযুদ্ধে যুবকদের অবদানের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতার ডাকে জীবন বাজি রেখে যুবকরা স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সর্ব্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে লাল-সবুজের একটি নতুন দেশ সৃষ্টি করে যুবসমাজ। বঙ্গবন্ধু যুবকদের সংগঠিত করেছিলেন দেশপ্রেমের মহান দীক্ষায়।

‘জাতির পিতা স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশ পুনর্গঠনেও যুবসমাজকে কাজে লাগান এবং শিক্ষিত ও কর্মদক্ষ যুবসমাজ সৃষ্টিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি রূপরেখা প্রণয়ন করেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধীচক্র জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশের যুব সমাজকে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার পথে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা চালায়।’

যুব সমাজকে উৎপাদনশীল কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুব সমাজকে শক্তিতে পরিণত করতে কাজ করছে। তাদের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় দক্ষ করে তুলতে কাজ করছে।

প্রশিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে সরকার। সারাদেশে ১০০ কর্মসংস্থান অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আত্মকর্মসংস্থানের চেষ্টাটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। কারণ বিএ, এমএ পাস করে শুধু চাকরি পিছে ছুটলেই চলবে না। নিজেরা নিজেদের কাজ করতে হবে। নিজের মাস্টার নিজেকেই হতে হবে, নিজে কাজ দিতে হবে।’

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবা দেশের আনাচে কানাচে পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, যুবদের তৈরি করতে রয়েছে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মনে করি, একটা প্রশিক্ষিত যুব শ্রেণি গড়ে তোলা এটা একান্তভাবে অপরিহার্য। তবে আজকে আমাদের কত সংখ্যক প্রশিক্ষিত যুবক রয়েছে তার একটা ডেটাবেজ তৈরির পদক্ষেপ চলছে। সেটা হলে পরে আমরা জানতে পারব, কর্মসংস্থান কাদের হয়েছে, আর কাদের হয়নি। যারা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে না তারাও যেন কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়, সেই সেই ব্যবস্থাটা আমরা নিতে চাই।’

যুবসমাজকে দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব থেকে বড় শক্তিই হচ্ছে যুব সমাজ। আজকে পৃথিবীর অনেক দেশ বয়োবৃদ্ধ দেশ হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও বাংলাদেশ আমাদের কর্মক্ষম যুবকশ্রেণি রয়ে গেছে এটা একটা বিরাট শক্তি। এই শক্তিটাকে আমাদের যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে।’

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের নির্বাচনি ইশতেহারেও যুবকদের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলেও স্মরণ করিয়ে দেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘সেখানে আমাদের যেটা শ্লোগান ছিল- তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। অর্থাৎ তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা আগামী দিনের সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এ পদক্ষেপ নিই। সেখানে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছে, যা সরকারের আসার পর আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

৪০ হাজার দক্ষ চালক তৈরিতে প্রশিক্ষণের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার জন্য যুব মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের অত্যন্ত সুপ্রশিক্ষিত চালক প্রয়োজন। এখানে আমাদের বিরাট ঘাটতি রয়ে গেছে। মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি যতো হচ্ছে গাড়ি কেনারও প্রবণতা বাড়ছে।

‘তবে আমাদের দেশে গাড়ি অধিকাংশ নিজে চালায় না। ড্রাইভার দিয়ে চালায়, তাতে আমাদের যুবকদের কর্মসংস্থান হয়- এটা ঠিক। কিন্তু সেই সঙ্গে আমি মনে করি যদি দক্ষতা অর্জন করা যায় তাহলে তাদেরও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM