উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আঁধারে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বাড়ি দখলের চেষ্টা হয়েছে। গত ৩ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টার পর নগরের লয়েল রোডের ৮৯৬ খতিয়ানভুক্ত বাড়িটি দখলের চেষ্টা করা হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) নাম ব্যবহার করেই দখলের এই অপচেষ্টা করা হয়।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী জহুরুল ইসলাম চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জহুরুল হাসান চৌধুরী, জহুরুল আনোয়ার চৌধুরী, ফয়েজুল ইসলাম, কে সোবহান চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা এস এম নুরুল আমিন, অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসাইন।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, আন্দরকিল্লা মৌজার লয়েল রোড সংলগ্ন ও মহল মার্কেটের পশ্চিম পাশের ৩২ দশমিক ৪০ শতাংশ ভূমির মালিক ছিলেন মরহুম মাওলানা আব্দুল লতিফ চৌধুরী। তাঁর মৃত্যুর পর ওয়ারিশদের নামে নামজারি হয় এবং হাল সন পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ রয়েছে। কিন্তু ৩ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে ২টার মধ্যে চউকের নাম ব্যবহার এই সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালানো হয়। এই প্রচেষ্টার অভিযোগ চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের বিরুদ্ধে।
এদিকে ৩ আগস্টের ঘটনার পর চউক এবং বাড়ির মালিকপক্ষ পত্রিকায় পাল্টাপাল্টি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে। বাড়ির মালিকপক্ষ মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর লতিফুল আলম চৌধুরী গং উচ্চ আদালতে কনটেম্পট পিটিশন দায়ের করলে আদালত ২ অক্টোবর শুনানি শেষে চউক চেয়ারম্যান, সচিব ও প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুই সপ্তাহের রুল জারি করেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জয়নিউজ প্রতিবেদক মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে চউক চেয়ারম্যান কিংবা প্রধান প্রকৌশলী কেউই কল রিসিভ করেননি। এরপর সচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন জয়নিউজকে বলেন, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা চউক কর্তৃক সরাসরি ভূমি দখলের অধিকার নেই। আইন অনুযায়ী চউক জেলা প্রশাসনকে জানাবে। জেলা প্রশাসন এলএ শাখা কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে চউকের হাতে হস্তান্তর করবে।
জানা যায়, পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালে কোর্ট রোড সম্প্রসারণের প্রকল্প গ্রহণ করা হলে তৎকালীন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়েছিল এই বাড়ি অধিগ্রহণ করতে। কিন্তু সড়ক থেকে দূরে হওয়া ‘অযৌক্তিক পরিকল্পনা’ আখ্যা দিয়ে সেটি পাকিস্তান আমলেই অধিগ্রহণ থেকে তারা সরে আসে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক নথিতে উল্লেখ আছে, ‘এল এ মামলা নং ৯০/৬২-৬৩ এর নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আন্দরকিল্লা মৌজার আরএস ২৩১২, ২৩১৩ দাগকৃত ৩২ দশমিক ৪০ শতক জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবভুক্ত ছিল। অধিগ্রহণের কার্যক্রম চূড়ান্ত না হওয়ায় প্রত্যাশী সংস্থার নিকট তা হস্তান্তর করা হয়নি। ক্ষতিপূরণের টাকাও কেউ উত্তোলন করেনি।
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা একটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভিটেমাটি চউকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের আইনানুগ সহায়তা প্রার্থনা করেন।
জয়নিউজ/ফারুক/আরসি