সারা দেশের ২০০২ সালের এসএসসি ও ২০০৪ সালের এইচএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলা হয় ২০১২ সালে।
একই ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে ওই গ্রুপে যুক্ত হয় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ অলিপুর পাটোয়ারি বাড়ির মফিজুল ইসলাম পাটোয়ারির ছেলে ও হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ওরফে রিগ্যান।
শুরু থেকে তার উদ্দ্যশ্যে ছিলো প্রতারণা করা। আর সেলক্ষ্যে গ্রুপে দীর্ঘদিন ধরে সহপাঠী বন্ধুদের আস্তা অর্জনের চেষ্টা করে আসছিলো। ফেসবুক পোস্টে আলিশান অফিস আর বাড়ির ছবি দিতেন।
তার আভিজাত্য আলিশান চোখ ধাঁধানো এসব পোস্টের কারণে গ্রুপটি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠে ব্যাচ বন্ধুদের কাছে। একপর্যায়ে ২০১৭ সালের দিকে গ্রুপের অ্যাডমিন হন ইসমাইল।
২০১৮ সালের শুরুর দিকে ইসমাইল ওই ফেসবুক গ্রুপে একটি পোস্ট দেন। চট্টগ্রাম নগরের দক্ষিণ খুলশী ৩ নম্বর সড়কে স্যানমার রয়েল রিজ নামে ২ হাজার ২শ ৮৯ বর্গফুটের প্রায় দু কোটি টাকা মূল্যমান আলিশান ফ্ল্যাট কিনে থাকতেন তিনি।
পাশের ৪ নম্বর সড়কের ৫৭০ নম্বর একটি ভাড়া বাড়িতে গ্লোবাল করপোরেশন নামের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খোলেন। ঠিকাদারিতে বন্ধুদের বিনিয়োগ করে বেশি টাকা আয়ের প্রলোভনও দেখাতেন।
সহজে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে গ্রুপ সদস্য অনেকেই ইসমাইলের ব্যাপারে খোজ খবর না নিয়ে তার ফাঁদে পা দিয়ে অনেকে সেখানে বিনিয়োগ করেছেন।
প্রথম দিকে প্রতি লাখে মাসে ৫ হাজার টাকা লাভের দেখাও পেয়েছেন কেউ কেউ। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্য বন্ধুরাও ইসমাইল হোসেনের ব্যবসায় টাকা ঢালেন।
শুরুর কয়েক মাস পরে হঠাৎ করে লাভ আসা বন্ধ হয়ে গেলে বন্ধুদের হইছই পড়ে যায় গ্রুপে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ইসমাইল হোসেন আসলে একজন প্রতারক। সে সকল বন্ধুদের টাকা হাতিয়ে পালিয়ে গেছেন।
ভুক্তভোগী ও পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, রাজশাহীসহ সারা দেশের ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপের বন্ধুদের কাছ থেকে প্রায় ৩শ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ইসমাইল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পালিয়েছেন।
তার অভিনব প্রতারণার শিকার হয়েছেন ব্যবসায়ী ও ব্যাংক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আইনজীবীও। দেশে বসে প্রবাসী বন্ধুদের থেকেও টাকা হাতিয়েছেন ইসমাইল।
তার বিরুদ্ধে গেল এক মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ইতিমধ্যে ৯টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। অনেকেই নতুন করে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে মামলা তদন্তে নেমে পুলিশ ইসমাইলের কোনো টাকা ও সম্পদের হদিস পাচ্ছে না। এদিকে তাঁকে দেশে এনে বিচারের দাবিতে গত অক্টোবরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগীরা।
ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে নগদ টাকা ছাড়াও বেশি টাকার ভাড়ার প্রলোভনে দামি গাড়িও হাতিয়েছেন ইসমাইল। পালানোর আগে গাড়িগুলো জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করে দিয়েছেন ধারণা পুলিশের।
তার গ্রামের বাড়ি হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের পাঠোয়ারি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়,বাড়ির ভেতরে পূর্ব পাশের ভিটায় এসি করা দোতলা বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। বর্তমানে সেখানে সুনশান নিরবতা বিরাজ করছে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, ১৫ দিন আগেও ইসমাইল তার বাবা-মা স্ত্রী দুই সন্তান, দুই ভাইয়ের পরিবার ও এক বোনসহ সকলেই এ বাড়িতে এসেছিলেন। তারা সবাই এখন দুবাই অবস্থান করছেন।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে ফেসবুকে গ্রুপ খুলে ব্যবসায় বিনিয়োগের কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রায় ৩শ কোটি টাকা হাতিয়ে পালিয়েছেন ইসমাইল।
অভিযোগ তদন্তে নেমে আমরা তার অবস্থান প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছি। গেল সেপ্টেম্বরে সে তার পুরো পরিবার নিয়ে দুবাইতে পালিয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে ইন্টারপোলের সহায়তা নিয়ে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বললেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
জেএন/পিআর