সেলিম উদ্দিন : প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে চট্টগ্রাম সেজেছে নতুন রূপে। শুভেচ্ছা পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো চট্টগ্রাম। উজ্জীবিত আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। সাধারণ জনগণের মধ্যে আগ্রহের কমতি নেই।
সরকারের ব্যাপক উন্নয়নে পাল্টে যাওয়া চট্টগ্রামবাসীর মাঝে চলছে উৎসবের আমেজ। ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসভায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চসিক মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি এক প্রস্তুতি সভায় ধারণা করেছেন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ সমাবেশে যোগ দিবেন।
জনসভাকে সফল করতে গত ৯ নভেম্বর আয়োজিত যৌথ প্রতিনিধি সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছন, ‘চট্টগ্রামে পলোগ্রাউন্ডের জনসমাবেশ জনস্রোতে রূপ নেবে।
চট্টগ্রাম জেলার সব উপজেলা-ইউনিয়ন, মহানগরের ৪১ ওয়ার্ডের সব ইউনিটের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে হাজির থাকতে হবে।’
নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানাতে গিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪ ডিসেম্বরের চট্টগ্রামের জনসভার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের অতীতের সকল জনসভার রেকর্ড গড়তে চাই। এই জনসভাকে আমরা জনসমুদ্রে পরিণত করব।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ’আমাদের জনসভা হবে স্মরণকালের সবচেয়ে বৃহত্তম এবং পরিচ্ছন্ন জনসভা। এতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক নির্দেশনা দিবেন বলে আশা করছি।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার মোট জনসংখ্যার ২২ লাখ ভোটাধিকারী নাগরিক।
ন্যূনতম হিসাবে দেখা যায়, এই ভোটারদের মধ্যে ৪০ শতাংশ আওয়ামী লীগের ভোটার। অর্থাৎ প্রায় ৮ লক্ষ ৮০ হাজার ভোটার আমাদের। যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আওয়ামী আদর্শ ধারণ করে। এই ৮ লাখ ৮০ হাজার ভোটারের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ শতাংশও যদি পলোগ্রাউন্ডের সমাবেশে আসে তাহলে প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার লোকের জমায়েত হবে নেত্রীর মহাসমাবেশে।
আবার এর সাথে রয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা। সুতরাং সহজেই অনুমান করা যায় ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ডের মহাসমাবেশে কত লোক হতে পারে।
আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘১১ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে আসছেন। এই জনসভায় শুধু আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আসবেন তা নয়; প্রিয় নেত্রীকে দেখতে চট্টগ্রামের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলে আসবেন।
জনসভা ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। এই জনসভা হবে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা। এ কারণে পলোগ্রাউন্ড মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হবে।’
আ জ ম নাছির আরও বলেন, ‘জনসভা সফল করতে প্রচার-প্রচারণা চলছে। নগরীর ২৪টি স্থানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাইকিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন গাড়িতে নগরজুড়ে মাইকিং করা হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে জনসমাগমের জন্য। আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সমাবেশটিতে উপস্থিতি হবে স্মরণকালের সেরা।
চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে ভাষণ দিবেন সেখানে নৌকার আদলে তৈরি করা হচ্ছে মঞ্চ। যেটির দৈর্ঘ্য ৮৮ ফুট, প্রস্থ ৪০ ফুট। মূল মঞ্চের সামনে থাকবে ১৬০ মিটার লম্বা একটি নৌকা।
গত ১৫ নভেম্বর থেকে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এই মঞ্চে একসঙ্গে ২০০ অতিথি বসতে পারবেন। সমাবেশস্থল ছাড়াও নিউমার্কেট, কদমতলী, সিআরবি ও টাইগারপাসসহ আশপাশের এলাকায় থাকবে ৩০০ মাইক।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে,, ২০১১ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষে নগরীর টাইগারপাসে বাঘের ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছিল। ক্রিকেটীয় আবহ সৃষ্টি করতে সেখানে নানা ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছিল।
ওসব ভাস্কর্য নগরীর নান্দনিকতা বাড়িয়ে দিয়েছিল। ভাস্কর্যগুলোতে দীর্ঘদিন রং-তুলির আঁচড় পড়েনি। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে রঙ-তুলির আঁচড়ে বিবর্ণতা দূর করে নবরূপ পেতে চলেছে এসব ভাস্কর্য।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে নগরজুড়ে পোস্টার-ব্যানার টানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। সড়কের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ।
বিশেষ করে নগরীর কাজির দেউড়ি, লালখান বাজার, ওয়াসা মোড়, বহদ্দারহাট, বিমানবন্দর এলাকা, মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, নিউমার্কেট, কাস্টমস মোড় ও ইপিজেড মোড়সহ নগরজুড়ে শোভা পাচ্ছে তোরণ, ব্যানার-পোস্টার।
চট্টগ্রামজুড়ে মাইকিং করার পাশাপাশি নেতাকর্মীরা লিফলেট বিতরণ করে লোকজনকে জনসভায় আসতে উদ্বুদ্ধ করছেন। পাড়া-মহল্লায় চলছে পথসভা ও মিছিলসহ নানা অনুষ্ঠান।
দলীয় নেতারা বলছেন, পলোগ্রাউন্ডের জনসভা স্মৃতিময় করে রাখতে চান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। চট্টগ্রামের ইতিহাসে এটি হবে সবচেয়ে বড় সমাবেশ। যেখানে উল্লেখযোগ্য লোক সমাগম ঘটবে।
এর আগে ২০১৮ সালের ২১ মার্চ চট্টগ্রামের পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তারও আগে ২০১৬ সালে বন্দর নগরীতে জনসভা করেছিলেন তিনি।
জেএন/এফও/পিআর