বই নয়, জ্ঞানের বিনিময়’ শ্লোগানে তৃতীয়বারের মতো নগরের জামালখানে অনুষ্ঠিকত হয়েছে বই বিনিময় উৎসব।
আজ শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী এই উৎসব সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে চলবে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। বিনামূল্যে যে কেউই তার একটি বই রেখে অন্য বই নিয়ে যেতে পারবেন।
সরেজমিন দেখা যায়, ব্যস্ততম রাস্তার দু’পাশের ফুটপাতে টেবিলে সাজানো রয়েছে সারি সারি বই। টেবিলগুলোর সামনে পাঠকের ভিড়। কেউ তার নিজের বইটি দিচ্ছেন, কেউবা আবার পছন্দের বইটি নিয়ে যাচ্ছেন।
কথাসাহিত্য, শিশুতোষ, কবিতা, ইতিহাস, রাজনীতি, আত্মজীবনী, দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব, গণিত ও বিজ্ঞানসহ ১২টি ক্যাটাগরিতে বই বিনিময়ের সুযোগ পান অংশগ্রহণকারীরা।
অনেককেই তার নিজের পুরোনো বইয়ের বিনিময়ে সদ্য প্রকাশিত বই নিয়ে যেতে দেখা যায়। আর এসব কাজে সহযোগিতা করেন ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজের তরুণ-তরুণী।
এখানে শুধু বইয়ের বিনিময়ই হচ্ছে না, বইয়ের জ্ঞান ছড়িয়ে পড়ছে পাঠক থেকে পাঠকে। সাহিত্যের সব শাখার বই যেখানে পাচ্ছেন বই প্রেমীরা।
জানা যায়, উৎসবের নিয়ম অনুসারে যে কেউ পাঁচটি বই জমা দিয়ে নিতে পারবে ৫টি বই। তবে বেঁধে দেওয়া আছে নিয়ম। যে ক্যাটাগরি বই দিবে ঠিক সেই ক্যাটাগরিরই বই নিতে পারবে বইপ্রেমিরা। তবে ছাড় দেওয়া আছে একাডেমি সম্পর্কিত বইয়ের ক্ষেত্রে। নেই কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা। দিতে ও নিতে পারবে অসংখ্য বই।
উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপসচিব ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল।
তিনি বলেন আমাদের চট্টগ্রাম নগরী ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখানে শিল্প সাহিত্য চর্চা দীর্ঘসময় ধরে শ্লথ। এমন আয়োজন তা আরো বেগবান করব।
অংকন দে অনিমেষের সঞ্চালনায় এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উৎসবের সমন্বয়ক সাইদ খান সাগর। আয়োজকদের মধ্যে এসময় উপস্থিত ছিলেন সহ-সমন্বয়ক মাহির আজরফ, রিনভি নুসরাত, সাদিয়া সুলতানা, সাইমা সুলতানা, ত্রিয়মা রায়, আয়মান আওসাফ, ইসলাম জিশাদ, কাজী রাকিব, সাইফুল্লাহ নাদিম, ঋত্বিক বড়ুয়াসহ অন্যান্যরা।
এছাড়াও বই বিনিময় উৎসবে দিনব্যাপী সমাগম ঘটে চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঙ্গনের স্বনামধন্য ব্যক্তিদের। সকালে উপহারস্বরুপ বই নিয়ে হাজির হন কবি ও সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী।
বই বিনিময় উৎসবে আসা অরুন দাশ নামে এক তরুন জানান, পুরাতন বইয়ের পরিবর্তে নতুন বই পাচ্ছি ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে। আমি সাইন্স ফিকশনের বই নেয়ার জন্য এখানে এসেছি।
আয়োজক সংগঠন ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ নিয়ে ধারণা পাওয়া গেলো আরেক সহ-সমন্বয়ক অংকন দে অনিমেষ এর কাছে।
জানা গেল, ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ মূলত একটি স্টোরিটেলিং প্লাটফর্ম যার কাজের মূল ক্ষেত্র বই আর চলচ্চিত্রজগত। সমাজের মানুষের গল্প বলে যাওয়ার অভিযাত্রায় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ আয়োজন করেছে একের পর এক চমৎকার সব আয়োজন।
পাঁচটি দেশের ফিল্মমেকারদের অংশগ্রহণে করোনাকালীন সময়ে লকডাউন শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ফিল্ম নিয়ে নিয়মিত ব্লগ, আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত ৪ টি শর্টফিল্ম নির্মাণ, বই বিনিময় পাঠাগার ইত্যাদি আয়োজনে ইতিমধ্যেই চলচ্চিত্র আর বইপ্রেমীদের নজর কেড়ে নিয়েছে এই সংগঠনটি।
সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবক পুনম চৌধুরী বলেন, প্রিয় মানুষের উপহার দেওয়া বই কিংবা প্রতিদিন হাত খরচ থেকে একটু একটু করে টাকা জমিয়ে কেনা বইগুলো যেন এই শহরের মানুষদের দৈনন্দিন জীবনের একেকটি গল্পের প্রতিচ্ছবি। আর সেই গল্পের হাতবদল করতেই এই আয়োজন। আমরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ৩০ জন কাজ করছি।
জেএন/হিমেল/পিআর