‘মায়ের কান্না’র স্মারকটি গ্রহণ করলে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত : তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচার‌্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিনাবিচারে নিহতদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’র স্মারকলিপিটি নিজে অথবা তার অধীন কর্মকর্তারা গ্রহণ করলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতেন।

- Advertisement -

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ক্যাবল অপারেটরস এসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশ (কোয়াব) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

- Advertisement -google news follower

১৬ বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোয়াবের নবনির্বাচিত সভাপতি এ বি এম সাইফুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোশাররফ আলী এ সময় বক্তব্য দেন। সহসভাপতি রাশেদুল রহমান মালিক এবং আল আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল মামুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান নাসিম, অর্থ সম্পাদক সেলিম সারওয়ার, সদস্য ফরিদউদ্দিন, গোলাম মোস্তফা প্রমুখ সভায় যোগ দেন।

ড. হাছান বলেন, ‘গতকাল ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের দিন ‘মায়ের ডাকে’র যারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে গেছেন, তারা আসলে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বিতর্কিত করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে এভাবে বিতর্কিত করা তাদের সমীচীন হয়নি। তিনি সেখানে গেছেন সেটি শুনে ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান বিনাবিচারে এবং ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে বিচার ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধাসহ যাদের ফাঁসি দিয়েছিল তাদের সন্তান-পরিজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’র জনা পঞ্চাশ মানুষ মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য সমবেত হয়েছিল। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তারা স্মারকলিপি দেওয়ার সুযোগ করে দেননি এবং সমবেতরা কথাও বলতে পারেননি। আমি মনে করি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত যদি তাদের স্মারকলিপি নিতেন এবং তাদের দু’টি কথা শুনতেন তাহলে তার সেখানে যাওয়া নিয়ে আজকে যে প্রচন্ড সমালোচনা হচ্ছে সেটি হতো না।’

- Advertisement -islamibank

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমত সেদিন ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়েছিল। যে জাতি স্বাধীন হতে যাচ্ছে, সে জাতিকে পঙ্গুত্ব করার লক্ষ্যেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। বুদ্ধিজীবী দিবসগুলোতে নানা অনুষ্ঠান থাকে, দেশের সাধারণ মানুষ এবং বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে সবাই শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। অনেক সময় বিদেশি রাষ্ট্রদূতরাও সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। সেই দিনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গেলে অনেক ভালো হতো এবং স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে বাঙালি জাতির যে কষ্ট, ত্যাগ, বুদ্ধিজীবীদের আত্মদান সেটির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হতো।’

‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ‘মায়ের ডাক’ নামে সংগঠনের কো-অর্ডিনেটরের বাসায় যাওয়ার পরামর্শ কে দিয়েছে আমি জানি না, তবে যারাই পরামর্শ দিয়েছে তারা সঠিক পরামর্শ দেয়নি’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তার নিজেরও দিবসটার দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার ছিল। তাছাড়া তিনি যে সেখানে যাবেন সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানে না, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেটিই বলেছেন। আর তিনি যাদের কাছে গেছেন তারা অর্থাৎ ‘মায়ের ডাক’ হচ্ছে সেই সংগঠন যারা গুমের অভিযোগ করছে। কিন্তু যারা গুম হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে তাদের অনেককেই আবার খুঁজে পাওয়া গেছে, অনেকেই খুনের ও মাদক চোরাচালানের মামলার দন্ডপ্রাপ্ত-সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী যাদেরকে বিএনপি গুম হয়েছে বলে বেড়াচ্ছে।’

আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের সামনে রাস্তায় যখন দশটা মানুষ দাঁড়ায়, আমাদের গাড়ি দাঁড়ায়। আমাদেরও নিরাপত্তাকর্মী থাকে, আমাদেরও নিরাপত্তার প্রচন্ড ঝুঁকি আছে। আমি জীবনে কয়েক দফা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি। কিন্তু মানুষ যখন কোন জায়গায় কথা বলার জন্য দাঁড়ায় তখন আমাদের চলন্ত গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। এখানে গাড়ি চলন্ত ছিল না, তিনি যখন ঘর থেকে বের হচ্ছিলেন তখন তাকে স্মারকলিপি দেওয়া হচ্ছিল। অন্তত স্মারকলিপিটা যদি তার স্টাফের মাধ্যমেও নেওয়া হতো তাহলে আজকের সমালোচনাটা হতো না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ঘনিষ্ঠ উন্নয়ন সহযোগী, আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে, তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ এবং আমি মনে করি এই ঘটনা আমাদের সর্ম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। তবে যারা এই কাজটি করেছেন এবং করার চেষ্টা করেন তাদের এ থেকে বিরত থাকা উচিত। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও আমি বিনীতভাবে অনুরোধ জানাবো, কেউ যদি এ ধরনের ভুল পরামর্শ দিয়ে তাকে একপেশে করার অপচেষ্টা চালায়, সেটির ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য।’

ক্ষমতায় যেতে পারলে বিএনপি কি কি করবে এ নিয়ে তাদের নেতৃবৃন্দের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায় তারা কি করবেন সে নিয়ে তারা বলতেই পারেন, এটি বলা কোন অপরাধ নয়। তবে বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে আর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেবে না। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যারা মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে, মানুষকে জিম্মি করে রাজনীতি করে, তাদের ডাকে তো মানুষ সাড়া দেয়নি এবং দেবেও না। তারা তো ১০ তারিখেই সরকার পতন ঘটাতে চেয়েছিল, কিন্তু সরকার পতন ঘটাতে এসে তারা নিজেদের পতন ঘটিয়ে চলে গেছে।’

কোয়াবের নবনির্বাচিত কমিটিকে তথ্যমন্ত্রীর অভিনন্দন

এর আগে কোয়াবের নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। তিনি বলেন, আপনাদের সাথে আমাদের মন্ত্রণালয় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে কারণ আপনারা আমাদের কাজের সহযোগী। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কোয়াবের সদস্যরাই সারাদেশে ক্যাবলের মাধ্যমে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে। ক্যাবল নেটওয়ার্ক ডিজিটালাইজ করার জন্য আমরা কাজ করছি এবং আপনাদের পরামর্শ অনুযায়ী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আশা করছি খুব সহসাই এ বিষয়ে আইনি জটিলতা কেটে যাবে এবং ক্যাবল নেটওয়ার্ক ডিজিটাল করা আমাদের পক্ষে সম্ভবপর হবে।

কোয়াব নেতৃবৃন্দ উত্থাপিত দাবির প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, ‘ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা অননুমোদিতভাবে টেলিভিশন চ্যানেল প্রদর্শন করছে -এ বিষয়টি আগেও শুনেছি। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ পেলাম, বেআইনিভাবে যদি কোনো কিছু করা হয়ে থাকে, তাহলে দ্রুত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কোয়াব সভাপতি এ বি এম সাইফুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোশাররফ আলী মন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, সম্প্রচারমন্ত্রীর বলিষ্ঠ পদক্ষেপের কারণেই তাদের বহু আকাক্সিক্ষত নির্বাচন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM