সৃষ্টি দে : পড়ন্ত বিকেলে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের বিশাল বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকার অদ্ভুত এক দৈত্য। যে কেউ দেখলে চমকে যাবে! তবে, এই দানবটি কারো ক্ষতি করছে না। এতে প্রাণ নেই, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি।
যা শোভা পাচ্ছে কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা প্লাস্টির ৪২ ফুট উচ্চতার এশিয়ার বৃহত্তম এই বর্জ্য দৈত্যটি বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
পরিত্যক্ত চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল, পাইপসহ নানা প্লাস্টিকের বর্জ্য কক্সবাজার, টেকনাফ ও প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন সৈকত থেকে কুঁড়িয়ে সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত প্লাস্টিক দিয়েই বানানো হয়েছে এই দানব। যা দেখে অবাক সৈকতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়রা।
মূলত বর্জ্য দৈত্য দিয়ে পর্যটকসহ সবার মাঝে সচেতনতার প্রভাব বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আয়োজকরা জানায়, সমুদ্র দূষণ রোধে প্লাস্টিকের তৈরি দানব বানিয়ে মানুষকে সচেতন করাই এর মূল লক্ষ্য।
যার উচ্চতা ৪২ ফুট, আর প্রস্থ ১৪ ফুট। কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন সৈকত থেকে সংগ্রহ করা ৮ টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘বর্জ্যদানব’। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালুচরে শোভা পাচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম দৈত্যটি।
প্লাস্টিক দূষণরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এই প্লাস্টিক দৈত্যটি তৈরি করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে এ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।
জেলা প্রশাসক বলেন, সমুদ্রকে রক্ষা করতে পারলে রক্ষা হবে প্রকৃতি ও প্রতিবেশ। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন থেকে জানানো হয়েছে কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিনের সৈকত থেকে সংগ্রহ করা প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে বানানো হয়েছে এই বর্জ্য দৈত্য।
৪২ ফুট উচ্চতার এই ভাস্কর্যটি বানাতে লেগেছে ৮ টন প্লাস্টিক বর্জ্য। সময় লেগেছে ৭ দিন। বিজয় দিবসের প্রাক্কালে সমুদ্র দূষণরোধে সচেতনতা তৈরিতে এই ভাস্কর্য বানানো হয়েছে বলেন জেলা প্রশাসক জানান।
এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয় বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও। তারা বলছেন, কক্সবাজারে ঘুরতে এসে সৈকতে ভিন্ন দৃশ্য দেখতে পেলাম। বিশাল আকৃতির এ দানব অবাক করে দিয়েছে।
প্লাস্টিক বর্জ্য যে আসলে সমুদ্রের ওপর দানবীয় অত্যাচার করছে তা প্রমাণ করতে হবে। প্লাস্টিকের দানব থামাতে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।
এটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ বর্জ্য ভাস্কর্য বলে দাবি করেন ভাস্কর আবীর কর্মকার। আবীর কর্মকারের সঙ্গে এ ভাস্কর্য তৈরিতে কাজ করেছেন শুভ্র, নির্ঝর, সাব্বির, বিপ্লব ও উজ্জল নামে কয়েকজন যুবক।
আয়োজকরা জানান, ‘প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিবেশ দূষিত হয়ে মানবসমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই, মানুষকে সচেতন করাই এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, সৈকতে অনেকে পানি খেয়ে বোতলটা বালুচরে ছুড়ে মারে। ঢেউয়ের তরে আসা জলে সেই বোতল চলে যাচ্ছে সমুদ্রে। আর সে প্লাস্টিক বর্জ্য খেয়ে মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণী। ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য। সমুদ্রের ক্ষতি করার অধিকার কারও নেই। তাই সমুদ্রকে রক্ষায় সত্যিই এটি প্রশংসনীয় একটি উদ্দ্যেগ।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মানস পালের সভাপতিত্বে উদ্বোধণী অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য রেজাউল করিম, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক আকরাম হোসেন বক্তব্য রাখেন।
এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি বিভীষণ কান্তি দাশ, সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস রানাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জেএন/পিআর