শান্তির ধর্ম ইসলামের নামে কেউ যেন বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যেন নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারে।’
দেশে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন। সোমবার দুপুরে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এসব মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন সরকাপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মের নামে অধর্ম চর্চা বন্ধ করবে এসব মসজিদ। এছাড়া ইসলামের জ্ঞান ও মূল্যবোধ বাড়াতেও কাজ করবে মসজিদ।’
ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান বক্তব্য দেন। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, রাজশাহী ও শরীয়তপুর থেকে কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ।
অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও-ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম সবসময় নারীদের স্থান দিয়েছে, সম্মান দিয়েছে। কাজেই জাতীর পিতা ন্যায্য কথা বলেছেন ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর। তিনি বলেছিলেন, ২৫ বছর আমরা দেখেছি ধর্মের নামে যুদ্ধ, ধর্মের নামে শোষণ, ধর্মের নামে অত্যাচার, ধর্মের নামে ক্ষুন, ধর্মের নামে ব্যভিচার এ বাংলার মাটিতে চলছে। এসব না চলার জন্য তিনি নির্দেশনাও দিয়েছিলেন।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে তিনি মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। তার সময়েই ওআইসিভুক্ত হয় দেশ। বঙ্গবন্ধুই ইসলামিক ফাউন্ডেশেন ও ইসলামিক বোর্ড গঠন করেন।’
আওয়ামী লীগ সবসময় ইসলামের খেদমত করে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে যুক্ত হওয়া ঠেকাতে ইমামদের প্রতি সচেতনতা তৈরির আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সারাদেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা ও মহানগর পর্যায়ে এ-ক্যাটাগরির ৬৯টি, উপজেলা সদরে বি-ক্যাটাগরির ৪৭৫টি ও উপকূলীয় এলাকায় সি-ক্যাটাগরির ১৬টিসহ মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ প্রকল্প চলমান।
এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫০টি মসজিদ খোলার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত ৯৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৬৪টির মধ্যে ১০০টি মসজিদ উদ্বোধন করলেন। আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে তৃতীয় ধাপে আরও ৫০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালু করা হবে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদগুলোতে ওজু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। এছাড়া হাজীদের জন্য রেজিস্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, লাশ দাফনের আগের প্রস্তুতি, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সম্মেলন কক্ষ ও থাকবে। ইসলামিক দাওয়াত, ইসলামী বই বিক্রয় কেন্দ্র এবং দেশী-বিদেশী অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধা থাকবে।
ইসলামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে শেখ হাসিনা সারাদেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল ইসলামী ভ্রাতৃত্ব এবং এর মূল্যবোধের প্রচার এবং সেইসঙ্গে চরমপন্থা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের সারমর্ম প্রচার করা কারণ ধর্ম কখনই এগুলোকে সমর্থন করে না। এটি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতেও মনোনিবেশ করবে।
এ ক্যাটাগরির অধীনে ৬৪টি জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় লিফট সুবিধা এবং ফ্লোর স্পেস ২,৩৬০.০৯ বর্গমিটার বিশিষ্ট প্রায় ৬৯টি চারতলা মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।
বি ক্যাটাগরির অধীনে প্রতিটি ১৬৮০.১৪ বর্গ মিটার ফ্লোর স্পেসসহ ৪৭৫টি মসজিদ তৈরি করা হচ্ছে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে সি ক্যাটাগরির অধীনে ১৬টি মসজিদের প্রতিটি ২,০৫২.১২ বর্গ মিটার মেঝে থাকবে।
জাতির পিতা ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন আইন, ১৯৭৫ প্রণয়ন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারার সাথে সঙ্গতি রেখে প্রকল্পটি সারা দেশে এই মসজিদ এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ইসলামী সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলার দিকেও দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
জেএন/এমআর