নগরীর সিটি গেইট এবং কাট্টলি এলাকার পানি প্রবাহের একমাত্র মাধ্যম কালির ছড়া খাল উদ্ধারের দাবীতে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম এবং আমরা আকবরশাহবাসী।
আজ সোমবার ১৬ জানুয়ারি সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন,সিটি গেইটের উজানে আকবর শাহ এলাকায় কালিরছড়া খালের প্রবাহধারা বিলুপ্ত করে নিজের অফিস ও খামার গড়ে তুলেছে ৯নম্বর উত্তর পাহাড়তলি ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর।
নগরের আকবরশাহ থানাধীন এলাকায় হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তে ও বিশালাকার পাহাড়গুলো কেটে মাটি বিক্রি, সরকারি পাহাড় কেটে প্লট আকারে বিক্রি করেছে জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় দুর্বৃত্তচক্র।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন এবং বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আলিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের রানী হিসেবে সুখ্যাতি পাওয়ার অন্যতম কারণ এই অঞ্চলের পাহাড়-টিলা-বন আর নদীসমৃদ্ধ সাগর। প্রকৃতির অপার সৃষ্টি এই সম্পদগুলোর কল্যাণে চট্টগ্রামের প্রকৃতি-পরিবেশ অনিন্দ্যসৌন্দর্য রূপ ধারণ করেছে। চট্টগ্রাম নগরে একখন্ড পার্বত্যাঞ্চল হিসেবে পরিচিত আকবরশাহ’র বিশালাকার পাহাড় ও টিলাগুলো কেটে সাবাড় করা হয়েছে। এখনও যেসব পাহাড়-টিলা রয়েছে সেগুলোও প্রতিদিন কাটা হচ্ছে। গত ৬-৭ বছরে এই অঞ্চলের অন্তত ৪২টি পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। শুরুটা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন করলেও পরবর্তীতে তা একজনমাত্র জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে নিশ্চিহ্নের পথে। শুধু পাহাড় নয়, ভূমি রেকর্ডে খাল হিসেবে চিহ্নিত প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি ঐতিহ্যবাহী কালিরছড়াটি ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে গরুর খামার ও জনপ্রতিনিধির ব্যক্তিগত অফিসসহ বিভিন্ন স্থাপনা। অথচ এই খাল ও ছড়া রক্ষায় বায়েজিদ লিংক রোডে মোট ৬টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে।
বক্তারা বলেন, সরকারি দপ্তরগুলো কালেভদ্রে উদ্যোগ নিলেও প্রকৃত অপরাধী বিশেষ করে পরিবেশ ধ্বংসে নেতৃত্ব দেয়া জনপ্রতিনিধিদের আইনের আওতায় আনতে অনীহা দেখা গেছে এ পর্যন্ত হওয়া কয়েকটি মামলায়। শুধুমাত্র ২০২২ সালেই পাহাড় কাটায় অন্তত ৬টি মামলা হয়েছে। কিন্তু এসব মামলায় শুধু শ্রমিকদের আসামি করা হয়, ছাড় দেয়া হয় রাজনীতির পদ-পদবী ব্যবহার করে পরিবেশ ধ্বংসে নেতৃত্ব দেয়া পাহাড়খেকোরা। এভাবে বিচারহীনতার কারণে আজ পুরো চট্টগ্রামের পরিবেশ বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলার প্রধানতম হাতিয়ার এই পাহাড়-ছড়া রক্ষা করে ভবিষ্যত প্রজন্মেও নিশ্বাস নেয়ার ব্যবস্থাটুকু রাখার দাবি জানান তারা।
এই কালিরছড়া দিয়ে সলিমপুরের পাহাড়ি পানিগুলো আকবরশাহ দিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে। এই অঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে এই ছড়াটি প্রধান মাধ্যম। তাই এটি অনতিবিলম্বে উদ্ধারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
সভায় বক্তারা আকবরশাহ’র অসংখ্য পাহাড় কাটার হোতা, কালিরছড়া দখলকারী কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমসহ অন্যান্য অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে তাদের শাস্তি নিশ্চিতের জোর দাবি জানান।
পরিবেশ সংগঠক সাংবাদিক আলিউর রহমান বলেন, আমরা ১ মাসের সময় দিচ্ছি। কালিরছড়া উদ্ধারে যদি কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হয়, আকবরশাহ’র অসংখ্য পাহাড় কাটার হোতাদের যদি আইনের আওতায় এনে শাস্তির পথ সুগম করা না হয়, অবশিষ্ট পাহাড়গুলো রক্ষায় যদি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে আমরাই আইনের কাটগড়ায় দাঁড় করানোর উদ্যোগ নেবো।
পরিবেশকর্মী ও উন্নয়ন সংগঠক মো. শফিকুল ইসলাম খানের সঞ্চালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলা কমান্ডার ফজল আহমেদ, গ্রীন ফিঙ্গার্স কো-ফাউন্ডার ঋতু ফারাবি ও আবু সুফিয়ান, পরিবেশ কর্মী আবসার উদ্দিন অলি, সার্ক মানবাধিকার কমিশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি মো. জাফর ইকবাল, ন্যাপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাশ গুপ্ত, কর্ণফুলী নদী ও খাল সুরক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক সাংবাদিক কামাল পারভেজ, সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের চট্টগ্রাম নগর সমন্বয় মো. ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মো. হুমায়ুন কবির, আকবরশাহ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং পরিবেশ সুরক্ষা ও অধিকার ফোরামের নগর সভাপতি মো. লোকমান আলী, আকবরশাহ থানা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি দিলীপ দাশ, আকবরশাহ থানা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ জাহিদ, পরিবেশ সুরক্ষাকর্মী সবিতা বিশ্বাস, সাংবাদিক ইসমাইল ইমন, আব্দুস সাত্তার টিটু, তৌকির উদ্দিন আনিস, আরাফাত রনি প্রমুখ।
জেএন/এফও/এমআর