আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে অফিস গুটিয়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে যার যেখানে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন সেখানে গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমিত আছে ২৩৫টি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের। এর বাইরে হাজারের বেশি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান আছে, যারা অফিস নিয়ে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এ ছাড়া অফিস গুটিয়ে ডোর টু ডোর পৌঁছে দেয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কত তার সঠিক হিসেব না থাকলে এই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রাজধানীর পাঁচটি স্থানে এক সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করে মঙ্গলবার তিনটি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ অফিস ও দুটি ফেরারি প্রতিষ্ঠানের ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো গুলশানের জে এম সি এইচ প্রাইভেট লিমিটেড, মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারের আলম আ্যন্ড ব্রাদার্স এবং উত্তরার আশকোনা মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের তৈমুর মানি এক্সচেঞ্জ। বাকি দুটি ফেরারি প্রতিষ্ঠান।
গ্রেপ্তাররা হলেন আবু তালহা ওরফে তাহারত ইসলাম তোহা, আছাদুল শেখ, হাছান মোল্যা, আব্দুল কুদ্দুস, হাসনাত এ চৌধুরী, শামসুল হুদা চৌধুরী ওরফে রিপন, সুমন মিয়া, তপন কুমার দাস, আব্দুল কুদ্দুস, কামরুজ্জামান রাসেল, মনিরুজ্জামান, নেওয়াজ বিশ্বাস, আবুল হাসনাত ও শাহজাহান সরকার।
বুধবার দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ টিমের তথ্য ও সহযোগিতায় রাজধানীর গুলশান-১, রিংরোড, মোহাম্মদপুর, উত্তরার আশকোনা, এবি মার্কেট, চায়না মার্কেটে এক সঙ্গে পাঁচজন বিশেষ পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকায় অবৈধ।’
তিনি জানান, অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে এক কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৬ টাকা সমমূল্যের ১৯টি দেশের বৈদেশিক মুদ্রাসহ সর্বমোট এক কোটি ৯৯ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৬ টাকা জব্দ করা হয়। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিজস্ব অফিস এবং ভাসমান যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি (লাইসেন্স) ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করে আসছিল।
সিআইডি প্রধান বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা সমমূল্যের বিদেশি মুদ্রা অবৈধভাবে ক্রয়-বিক্রয় করে আসছিল। মাসে ২২ বা ২৪ কর্মদিবসে আরও কী পরিমাণ তারা ক্রয়বিক্রয় করছেন তারা ধারণা করা যায়।
‘গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ অনুযায়ী মামলা রুজুর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সারাদেশে আরও এক হাজারের বেশি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাহলে সারাদেশে কী পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা আমাদের অপরাশেনাল কার্যক্রম অব্যাহত রাখব। আমাদের অভিযানের কারণে অনেক অবৈধ প্রতিষ্ঠান অফিস গুটিয়ে কাঁধে-ঘারে ব্যাগ নিয়ে ঘুরে ঘুরে ফোনে ফোনে যোগাযোগ করে ব্যবসা করছে। যার যেখানে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা দরকার সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। বিনিময়ে ডলার বা অন্য বিদেশি মুদ্রার ন্যায্য মূল্যের তুলনায় বেশি টাকা নিচ্ছে।’
অতিরিক্ত আইজিপি আরও বলেন, ‘যখন কোনো কাজে, চিকিৎসা বিদেশে যাচ্ছেন তার আগে কিছু প্রসিডিউর আছে। ভিসা পাবার পর তিনি বাংলাদেশের যে কোনো ব্যাংকে ভিসা দেখালে বিদেশি মুদ্রা পাবেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তা দিতে বাধ্য। তাহলে কেন তারা অবৈধভাবে ১০০ টাকার ডলার ১১৫ বা ১২০ টাকায় ক্রয় করবেন! এটা অন্যায় ও অবৈধ। আমরা এই অবৈধ কাজকে উৎসাহিত করতে পারি না।
‘লাগবেই যখন তখন বৈধভাবে নিব, ব্যাংক কিংবা বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান থেকে নিব। তাহলে ফুলে ফেপে উঠা এসা অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে যাবে। এই মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈধ। কিন্তু তারা টাকা বা ডলার পাচার করেছেন কি না?’
তারা হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কি না জানতে সিআইডি প্রধান বলেন, ‘অল্প সময়ে অল্প পুঁজিতে বেশি আয়ের আশায় অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জগুলো তৈরি হচ্ছে। অভিযানে অবৈধ ৫টি মানি এক্সচেঞ্জের মধ্যে তিনটির অফিস থাকলেও বাকি দুটো প্রতারণামূলক বা ফেরারি। তারা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মানি এক্সচেঞ্জ করতেন।
‘ফোনে ফোনে যোগাযোগ করলেই যদি একজন টাকা বা বিদেশি মুদ্রা বা ডলার পেয়ে যায়, তাহলে সে কেন ব্যাংকে যাবে? যদিও প্রক্রিয়াটা অবৈধ। এই ক্ষেত্রে ব্যাংকের সেবার যে মান সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’
সেবা বাড়ানোর কোনো তাগিদ আপনারা দিচ্ছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা প্রবাসী তারা দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বাসায় বসেই টাকা পাঠায়। এক্ষেত্রে সময় বাঁচে ও কোন হ্যারাসমেন্ট বা বাড়তি কোন ভাড়া লাগে না। দেশের মানুষ ঘরে বসে টাকা পেয়ে যায়। তবে এটা অবৈধ।
জেএন/এমআর