ঢাকা মহানগরের মিরপুর এলাকার একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া শিশু ছাত্রীকে অপহরণ করে দুবাই পাচারের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রেখেও উদ্দ্যেশ্য সফল করতে পারেনি পাচারকারীরা।
র্যাবের চৌকশ টিমের জালে ধরা পড়েছে সংঘবদ্ধ নারী পাচারকারী চক্রের তিন সদস্য। শনিবার রাতে নগরীর হালিশহর ও হাটহাজারী উপজেলায় অভিযান চালিয়ে একজনসহ মোট তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
তাছাড়া গ্রেফতারকৃদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া এলাকার একটি বাড়ি হতে ঢাকা হতে অপহৃত ৯ বছরের সেই নাবালিকা মেয়েকেও উদ্ধার করতে সক্ষম হয় র্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের মৃত তোফায়েল আহমেদের ছেলে আবু সুফিয়ান রানা (৩১), তার স্ত্রী শারমিন কাওসার হান্না (২২) ও চিপাতলী ইউনিয়নের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে নুরুজ্জামান (৫৫)।
রবিবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে র্যাবের গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছুদিন পূর্বে দুবাই প্রবাসী মো. শহিদুল করিমের সাথে অপহৃত ছাত্রীর বড় বোনের বিয়ে হয়।
বিয়ের পর ভিকটিমের পরিবার জানতে পারে, শহিদুল বাংলাদেশ থেকে দুবাই নারী পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত। শহিদুল ভিকটিমের বোনকে বিয়ের নামে দুবাই নিয়ে গেলেও দুবাই নাইট লাইফের কাছে তাকে বিক্রি করে অন্য দেশে থাকতে শুরু করে।
এদিকে বড় বোনকে পাচারের পরেই ক্ষ্যান্ত হয়নি চক্রটি। ছোটবোন নাবালিকা মেয়েটিকেও বিদেশ পাচার করার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে।
গত ৩ জানয়ারি সকাল ৯টায় ছাত্রীটি মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও ভিকটিম বাড়ি ফিরে না আসায় ভিকটিমের মা এবং তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখোঁজি করেন।
অনেক খোঁজাখোঁজি করার পর এক সময় ভিকটিমের পরিবার জানতে পারেন শহিদুল এবং তার সহযোগী সাকিব এবং নুরুজ্জামানের সহায়তায় ভিকটিমকে বিদেশ পাচারের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে।
এ ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদি ঢাকা মহানগরীর শাহ আলী থানায় ৩ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র্যাব।
এসময় অভিযুক্ত দুই আসামি চট্টগ্রামে হালিশহরের একটি বাসায় অবস্থান করছে বলে জানতে পারে। পরে ওই এলাকায় র্যাবের একটি টিম অভিযান চালিয়ে দম্পতি আবু সুফিয়ান ও শারমিন কাওসার হান্নাকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাটহাজারী উপজেলা থেকে নুরজ্জামানকে গ্রেফতার করে।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামী নুরুজ্জামানকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে এবং তার দেয়া তথ্য মতে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানামীন নলুয়া এলাকার একটি বাড়ি হতে ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সিনিয়র (সহকারী পরিচালক) মো. নূরুল আবছার জানান, গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা অন্যান্য সিন্ডিকেট সদস্যদের সহায়তায় অসহায় মেয়েদের বিভিন্নভাবে ভালো চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে দুবাই পাচার করতো।
নাবালিকা শিশু ভিকটিমকেও অপহরণ করে তারা দুবাই পাচার করার জন্য চট্টগ্রাম ও আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রেখেছিল। তবে র্যাবের জালে এ চক্রের তিনজন গ্রেফতার ও অপহৃত ভিকটিম উদ্ধার হয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
জেএন/পিআর