মেয়র এবং পরে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন ঢাকা-১১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ। কিন্তু সৎ থাকতে চান বলে সেসব প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন।
রোববার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন দাবিই করেন এমপি রহমতুল্লাহ।
রহমতুল্লাহ বলেন, ‘আমি কিন্তু ঢাকার এমপি। এখনকার মধ্যে মোস্ট সিনিয়র এমপি। এখানে মতিয়া আপা আছে, আমার চেয়ে মোস্ট সিনিয়র পাঁচ/ছয়জন আছে। আমার বয়স এখন পঁচাত্তর চলতেছে। হ্যাঁ, ছিয়াত্তর চলতেছে। আমি আর ফিরোজ রশীদ একসঙ্গে পড়তাম। আমার ছেলের বয়সই ৪৯। অনেকেই প্রশ্ন করে, আমি পাঁচবারের এমপি। মন্ত্রী হলাম না কেন?’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এমপি রহমতুল্লাহ বলেন, ‘হানিফ সাহেব মারা যাওয়ার পরে মেয়র অফার করেছিলেন। আমি আপারে বললাম, ওখানে যাব না। এখানে টেবিলে চুরি করে, বাতাসে চুরি করে এবং এখানের মধ্যে সব চোর। আমি যাব না।’ তিনি দাবি করেন, এরপর তাঁকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব কারণেই রাজি হননি।
রহমতুল্লাহ বলেন, ‘আমি ঢাকা শহরে সর্বপ্রথম ট্যাক্স বাহাদুর নির্বাচিত হয়েছি। আমার অনেক কোম্পানি আছে। খালি দুইটা নামই বলব। একটা হলো এপেক্স ট্যানারি। আপনারা এপেক্স ট্যানারিকে খুব ভালোভাবে চেনেন। আরেকটা হলো এফডি ফুটওয়্যার। এটা আমার ছেলে করছে। এটারও টার্নওভার ৫০০ কোটি টাকার মতো। আমার ছেলে বাংলাদেশের বড় ওষুধ কারখানা করবে, জায়গাও কেনা হয়ে গেছে ৮০ বিঘা। আল্লাহর রহমতে ব্যাংকে কোনো দেনা নাই। আমাদের কী সম্পত্তি আছে, এটা ওপেনলি বলব না। এটা শুধু মতিয়া আপা এবং প্রধানমন্ত্রীকেই বলব।’
বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে রহমতুল্লাহ বলেন, ‘আমি জমিউতুল আহলে হাদীসের প্রধান উপদেষ্টা। সারা দেশে এর প্রায় আড়াই কোটি ভোটার আছে। আমার চামড়ার সাপ্লায়ার আছে প্রায় ১ কোটির মতো আছে তাদের পরিবার নিয়ে। ধাক্কা দিয়ে ফালানো তো দূরের কথা, পায়ে ধরেও তো বিএনপির ক্ষমতা নাই—শুধু আমারে না, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কোনো একটা সিটে হারানোর।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এ সদস্য আরও বলেন, ‘বিএনপি দেখেন একটা সিট পাবে কি না! আমি জমিউতুল আহলে হাদীসের উপদেষ্টা। এই আড়াই কোটি লোককে আমি যা বলব…একসময় তারা সবাই বিএনপিকে ভোট দিত। আজকে ৯০ শতাংশ আহলে হাদীসের লোক আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। কারণ আমি যেহেতু জাকাতের টাকা বাংলাদেশের বড় বড় মাদ্রাসা, বড় মাদ্রাসায় ১ লাখ টাকা, ছোট মাদ্রাসায় ৫০ হাজার টাকা। আহলে হাদীসের কমিটি আমি গঠন করি। তাই যেখানে বিএনপি সমর্থক ছিল, এখন সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক এ সভাপতি বলেন, ‘খালেদা জিয়া একসময় বলত, আমি কেন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি। আমি কিন্তু বড় ব্যবসা করি। আমাদের এত জায়গা-জমি আছে। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে আমাদের পরিবারের নাম পাওয়া যাবে।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রহমতুল্লাহ বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমার বউকে ডাক নামে চিনেন। দেখা হলেই বলেন, এই খুকি তুমি কেমন আছ? আমার ছেলের নাম হলো রণ। তিনি রণ কেমন আছে সেটাও জিজ্ঞেস করতেন। এই জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমাকে অনেক কিছু দিতে চেয়েছেন আপা। আমি নিয়ে কী করব? কারে দিব। আমার ছেলে–মেয়েরা সব বিলেত-আমেরিকা থেকে পড়ালেখা করেছে। আমার দুই নাতি হার্ভার্ডে, দুই নাতি অক্সফোর্ডে পড়ালেখা করছে। আমার কাছে টাকা পয়সা নয়, লেখাপড়াই মূল। এর মধ্যে আপা আমাকে চারটা প্লট দিতে চেয়েছিল কিন্তু আমি নিইনি।’
জেএন/এমআর