প্রথমার্ধে তো একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে বায়ার্ন। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম অর্ধেক সময় গেল একই ধারায়। এ সময়ে এগিয়েও যায় দলটি। তবে শেষ ২০ মিনিটে সমতায় ফিরতে প্রবল চাপ সৃষ্টি করে পিএসজি। কিন্তু গোল আদায় করে নিতে পারেনি। ফলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় প্যারিসের ক্লাবটির।
মঙ্গলবার রাতে পার্ক দে প্রিন্সেসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর ম্যাচে পিএসজিকে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারায় বায়ার্ন মিউনিখ। ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন পিএসজির সাবেক তারকা কিংসলে কোমান। আগামী ৮ মার্চ অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ফিরতি লেগের ম্যাচে মুখোমুখি হবে দলদুটি।
সাম্প্রতিক সময়টাই অবশ্য ভালো যাচ্ছে না পিএসজির। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ নিয়ে টানা তৃতীয় ম্যাচ হারল দলটি। মূলত বিশ্বকাপ বিরতি থেকে ফিরে আসার পর ছন্দ হারাতে থাকে তারা। মৌসুমে পাওয়া পাঁচটি হারের স্বাদ বিশ্বকাপের পরই পেয়েছে তারা। অন্যদিকে সব প্রতিযোগিতা মিলে টানা চার ড্রয়ের পর টানা চারটি ম্যাচ জিতে নিল বায়ার্ন।
এদিন ইনজুরি থেকে ফিরে আসা কিলিয়ান এমবাপেকে প্রথম একাদশে রাখেননি পিএসজি কোচ। তাকে ছাড়া শুরুতে পাত্তাই পায়নি দলটি। সুযোগ তৈরি তো দূরের কথা প্রথমার্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো শটও নিতে পারেনি পিএসজি। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে মেসির ফ্রিকিক থেকে নেওয়া শটটিই ছিল একমাত্র। সেটাও বাধা পায় মানব দেওয়ালে। বায়ার্ন এ অর্ধে শট নেয় ১০টি, যার মধ্যে দুটি ছিল লক্ষ্যে।
ম্যাচের ৩০ সেকেন্ড না যেতেই গোল করার মতো সুযোগ পায় বায়ার্ন। তবে চুপো মোটিংয়ের শট লক্ষ্য থাকেনি। ২৭তম মিনিটে বেঞ্জামিন পাভার্ডের বাড়ানো বল জামাল মুসিয়ালা ধরতে পারলে বিপদে পড়তে পারতো পিএসজি। তবে দারুণ ট্যাকেল কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন সের্জিও রামোস। তিন মিনিট পর কোমানের ক্রসে চুপো মোটিংয়ের হেডও লক্ষ্যে থাকেনি।
৪০তম মিনিটে ডি-বক্সে বিপজ্জনক জায়গায় বল প্রায় লিওন গোরেটজা। এবারও দারুণ ট্যাকলে বিপদমুক্ত করেন রামোস। তিন মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ইয়াশুয়া কিমিখের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান পিএসজি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোনারুমা।
৫০তম মিনিটে ওয়ারেন জায়ার-এমেরির ক্রস থেকে নেইমার বল ধরতে পারলে বিপদে পড়তে পারতো বায়ার্ন। তবে দারুণ ট্যাকলে ব্লক করেন দায়ত উপামেকানো। তিন মিনিট পরই ডেডলক ভাঙে দলটি। বদলি খেলোয়াড় আলফান্সো ডেভিসের ক্রস থেকে ডি-বক্সে ফাঁকায় শট নেন সাবেক পিএসজি তারকা কোমান। বল গোলরক্ষক বরাবর থাকলেও ঠেকাতে পারেননি দোনারুমা। হাতে লেগে বল জালে জড়ালে এগিয়ে যায় সফরকারীরা।
৫৭তম মিনিটে কার্লোস সোলের ও জায়ার-এমেরিকে তুলে এমবাপে ও ফ্যাবিয়ান লুইজকে মাঠে নামান পিএসজি কোচ। কিন্তু ম্যাচের গতি বদলায়নি। ৬২তম মিনিটে চুপো মোটিং সাইড ভলি গোলরক্ষক দোনারুমা ঝাঁপিয়ে না ঠেকালে ব্যবধান বাড়াতে পারতো সফরকারীরা। পরের মিনিটে তো দুর্ভাগা চুপো মোটিং। এবার তার শট বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে। এর পরের মিনিটে কর্নার থেকে পাভার্ডের হেড অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে ঠেকান দোনারুমা। তিন মিনিটের ব্যবধানে তিনটি দারুণ সুযোগ নষ্ট হয় সফরকারীদের।
৭৩তম মিনিটে বায়ার্ন গোলরক্ষক ইয়ান সোমারকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন এমবাপে। কিন্তু তার শট ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক। আলগা বলে সুযোগ ছিল নেইমারেরও। তার শট গোললাইন থেকে ঠেকান । আবারও ফিরতি বল পেয়ে যান এ ব্রাজিলিয়ান। এবার তার শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান সোমের। তবে এবার আলগা বল পেয়ে বল জালে পাঠিয়েছিলেন এমবাপে। এবার অফসাইডে ছিল তিনি।
তবে এরপরই যেন উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে স্বাগতিকরা। সমতা ফেরাতে বায়ার্নকে চেপে ধরে তারা। ৭৭তম মিনিটে কর্নার থেকে হেড নিয়েছিলেন মার্কুইনহোস। তবে জোর না থাকায় সহজেই ধরে ফেলেন গোলরক্ষক সোমের। ৮২তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে বদলি খেলোয়াড় টমাস মুলার ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু উড়িয়ে মারেন তিনি।
পরের মিনিটে ফের বল জালে জড়িয়েছিলেন এমবাপে। কিন্তু এবার নুনো মেন্ডিস অফসাইডে থাকায় গোল মিলেনি তাদের। ৮৪তম মিনিটে মেসির শট গোললাইন থেকে ঠেকান পাভার্ড। এর দুই মিনিট পর ভিতিনহার শট দারুণ দক্ষতায় লুফে নেন সোমের। এরপরও বেশ কিছু সুযোগ ছিল তাদের। কিন্তু গোল মিলেনি। শেষদিকে দ্বিতীয় লাল কার্ড দেখে বহিষ্কার হন পাভার্ড। কিন্তু হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় স্বাগতিকদের।
জেএন/এমআর