সেলিম উদ্দিন,বিশেষ প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ছয় বছর ধরে জোর করে খালি কন্টেনার যেকোনো জাহাজে তুলে দেয়ার সিস্টেমটি চালু রয়েছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের ইমেজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে অভিমত ব্যবসায়ীদের।
বিশ্বের আর কোনো বন্দরে এর নজির নেই। তাই চট্টগ্রাম বন্দরের ফোর্সড শিপমেন্ট নিয়ে আন্তর্জাতিক শিপিং বাণিজ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
খালি কন্টেনারের ফোর্সড শিপমেন্ট বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ কন্টেনার শিপিং এসোসিয়েশন। পৃথক পত্রে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে সংগঠন দুটি এ আহবান জানান।
২০১৫ ও ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনারের জট হয়েছিল। খালি কন্টেনারগুলো বন্দরের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠে। ওই সময় বন্দর ইয়ার্ডে মোট ২৭ হাজার থেকে ৩০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার রাখার জায়গা ছিল।
খালি কন্টেনারের কারণে ইয়ার্ডে জায়গার অভাব প্রকট হওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। ওই সময় বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে ফোর্সড শিপমেন্ট সিস্টেম চালু করে। যাতে নির্দিষ্ট ফিডার অপারেটরের অপেক্ষা না করে বন্দরে পণ্য নিয়ে আসা যেকোনো জাহাজে যেকোনো খালি কন্টেনার তুলে দেয়া হয়।
ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কন্টেনারের মালিক এমএলও যে ফিডার সার্ভিসের জাহাজ পরিবহন করেছে তাদের সাথে ভাড়া মিটাবে। বন্দরের জট সামলানোর স্বার্থে এর কোনো বিকল্প ছিল না।
কিন্তু এই সিস্টেমের ফলে সংশ্লিষ্ট এমএলও এবং ফিডার সার্ভিস অপারেটরের মধ্যে ভাড়া নিয়ে বিবাদ লেগে থাকে। খালি কন্টেনারের পরিবহন খরচ বেড়ে যায়।
বিষয়টি এমএলওদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করে। বিশ্বের আর কোনো বন্দরে ফোর্সড শিপমেন্ট না থাকায় তারা চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে এমএলওদের পক্ষ থেকে নানাভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়।
তারা এই সিস্টেম বন্ধ করার জন্য শিপিং এজেন্টদের চাপ দিতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে শিপিং এজেন্টদের পক্ষ থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বরাবরে জরুরি পত্র দেওয়া হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৬ সালের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। এখন বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার টিইইউএসের বেশি। কিন্তু বন্দরে বর্তমানে ২৫ হাজার টিইইউএসের বেশি কন্টেনার থাকে না।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বন্দরে খালি কন্টেনার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই ফোর্সড শিপমেন্ট করারও প্রয়োজন নেই। এই সিস্টেম বন্ধ করা হলে বন্দরের ইমেজ বৃদ্ধি পাবে।
একইভাবে বাংলাদেশ কন্টেনার শিপিং এসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি ক্যাপ্টেন এ এস চৌধুরীও বন্দর চেয়ারম্যান বরাবরে পত্র দিয়েছেন। সোমবার দেয়া এই দুটি পত্রে বিদ্যমান ফোর্সড শিপমেন্ট সিস্টেমকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় বলা হয়েছে।
জেএন/এফও/পিআর