ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য এক কোটি ৬০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল (ভোজ্যতেল) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে খরচ হবে ২৭৬ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দেশীয় দুই প্রতিষ্ঠান থেকে এ তেল কিনতে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সভার সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আজকের সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় মেঘনা এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড থেকে এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যয় হবে ১৯০ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, টিসিবির জন্য এ তেল কেনা হবে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৭২ টাকা ৯৫ পয়সা। আগে এর ক্রয়মূল্য ছিল ১৭৭ টাকা। স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে এই সয়াবিন তেল কেনা হচ্ছে।
সাঈদ মাহবুব খান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএন ট্রেডিং ঢাকা’র কাছ থেকে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে খরচ হবে ৮৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৭২ টাকা ৮০ পয়সা। আগে এর ক্রয়মূল্য ছিল ১৭৮ টাকা ৪৫ পয়সা। স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এ তেল কেনা হবে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড থেকে এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ১৯১ কোটি ৯৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। এতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়ে ১৭৪ টাকা ৫০ পয়সা।
ওই সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্কের আরবিল বাকলিয়াত হুবুবাত সান্তিক কোম্পানি থেকে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ৭৩ কোটি ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
তার আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ও ৮ হাজার টন মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। তেল কিনতে ১৯৪ কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার এবং মসুর ডাল কিনতে ৭৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়।
প্রতি লিটার তেলের ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৭৬ টাকা ৮৮ পয়সা। মেঘনা এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের কাছ থেকে এ তেল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অন্যদিকে প্রতি কেজি ডাল কিনতে খরচ ধরা হয় ৯১ টাকা ৬০ পয়সা। তুরস্কের আরবিল বাকলিয়াত হুবুবাত সান্তিক থেকে এ ডাল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট বিআইএনকিউ।
তার আগে ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় জরুরি ভিত্তিতে টিসিবি কর্তৃক স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে খরচ ধরা হয় ১৯৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় টিসিবির জন্য ১০ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। শুন শিং এডিবল ওয়েল লিমিটেডের কাছ থেকে ২০০ কোটি ২০ লাখ টাকায় এ তেল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এছাড়া গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সেনা এডিবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রির কাছ থেকে ৪৪ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে মোট ব্যয় ধরা হয় ৮১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি লিটারের দাম ধরা হয় ১৮৪ টাকা ৫০ পয়সা।
একই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে শুন শিং এডিবল অয়েল লিমিটেড থেকে ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ১০১ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি লিটারের দাম ধরা হয় ১৮৪ টাকা ৫০ পয়সা।
ওই সভায় আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ওমানের জাদ আল রাহিল ইন্টারন্যাশনাল এলএলসি সুলতানাত থেকে এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ১৫১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি লিটারের জন্য খরচ ধরা হয় ১৩৭ টাকা ৯৪ পয়সা।
অপরদিকে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে আরবেল বাকলিয়াত হুবুবাত সান্তিক এএস থেকে ৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ৮১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
ফ্যামিলি বা পরিবার কার্ডের আওতায় একজন কার্ডধারীর কাছে সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি ও দুই কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১১০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৬০ টাকা ও মসুর ডাল ৭০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে শুধু সিটি করপোরেশন এলাকা ও টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়-সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোয়।
জেএন/এমআর