চট্টগ্রাম নগরীতে ডট গ্যাং নামের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ফেসবুক আইডি খুলে তাদের বিভিন্ন অপকর্মের স্থির চিত্র এবং ভিডিও চিত্র ধারন করে আপলোড করে আসছে।
চক্রটির প্রধান হোসাইনুল আমিন মিমসহ ৭ সদস্যকে আজ সকাল ১০ টায় চকবাজারের বালি আর্কেড শপিং সেন্টারের সামনে থেকে আটক করেছে র্যাব।
আটককৃতরা হলেন-হোসাইনুল আমিন মিম (১৬), সামিউল ইসলাম(১৬), আহনাফ শাহরিয়ার (১৬), মোঃ শরিফুল ইসলাম (১৬), শানিপ শাহীদ (১৬), মাশহাদ সিদ্দিকী (১৬) ও আবু তারেক (১৬)।
আটককৃতরা চট্টগ্রামের একটি কোচিং সেন্টারের নিয়মিত ছাত্র ছিলো। সেখানে থেকে তাদের সবার সাথে পরিচয় এবং একসাথে চলা ফেরা ও আড্ডা দেওয়া শুরু হয়।
আড্ডা দেওয়ার সময় কথিত একটি গ্রুপ তাদের কাজে কর্মে বাধা দিতে থাকে এবং অনেক মারধরও করে। মূলত এখান থেকেই “ডট গ্যাং” গ্রুপটির সৃষ্টি ও কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথম থেকেই গ্রুপটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল হোসাইনুল আমিন মিম। হোসাইনুল আমিন মিম তার নিজের নামের একটি পেইজ এবং হোয়াটস্যাপে একটি গ্রুপ তৈরি করে সেখানে তাদের কার্যক্রমের বিভিন্ন স্থীর চিত্র এবং ভিডিও চিত্র আপলোড করত।
তারা তাদের সকল প্রকার অপকর্মে ভিডিও গুলো পেইজে আপলোড করে ফলোয়ার্স বাড়ানোসহ সুনাম এবং খ্যাতি অর্জন করতে চেয়েছিল।
এছাড়াও তারা চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে ইভটিজিং, ছিনতাই, দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ড সংগঠিত করেছে। তাদের কর্মকান্ডে স্থানীয় বড় ভাইরা মদদ দিচ্ছে বলে জানা যায়।
চট্টগ্রাম মহানগরীর ১৬টি থানা এলাকায় বিভিন্ন নামে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশতাধিক কিশোর গ্যাং। যারা জড়িয়ে পড়েছে দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডে। সেবন করছে ইয়াবা, ফেন্সিডিলসহ নানা মাদকদ্রব্য। আধিপত্য বিস্তারে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্রও।
গত এক দশকে চট্টগ্রাম শহরের জামালখান এলাকায়ও একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বিভিন্ন ছত্রছায়ায় এসব গ্রুপের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এদের অত্যাচারে যেন সাধারণ মানুষ, রিকশা চালক, সিএনজি চালক, ফুটপাত ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং স্কুলছাত্র-ছাত্রীসহ মহানগরীর বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অতিষ্ঠ হয়েছে পড়ছে।
র্যাব জানায়,হোসাইনুল আমিন মিম মূলত এই গ্রুফটি লিড দিত। “ডট গ্যাং” নামের ফেসবুক এবং হোয়াটস্যাপ গ্রুপ সে নিজে কন্ট্রোল করতো। সে ছিলো চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার এলাকার ত্রাস।
মিমের নেতৃত্বে এই গ্রুপটি চট্টগ্রামের জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় অনেক ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তার নামে চট্টগ্রামের চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী আছে। মিমের বাবা একজন ডাক্তার এবং মা চাকুরিজীবী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছিলো ছোট।
আটক মাশহাদ হোসেন “ডট গ্যাং” কিশোর গ্রুপের এক্টিভ সদস্য। মিমের পরেই ছিলো তার অবস্থান। মাশহাদ এবং মিম একই স্কুলে পড়া লেখা করেছে সেই সুবাধে তাদের পরিচয়।
মাশহাদ চট্টগ্রামের জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় অনেক ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং হতাহতের ঘটনায় মিমের সাথে সক্রিয়ভাবে থেকে কাজ করেছে। মাশহাদের বাবা এবজন প্রবাসী এবং মা গৃহিণী। ৩ ভাই বোনের মধ্যে মাশহাদ ছিলো ছোট।
আটক সামিউল আমিন “ডট গ্যাং” গ্রুপের সাথে থেকে চট্টগ্রামের জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় ৪/৫ টি মারামারিতে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলো। সামিউলের বাবা পেশায় একজন মুদি দোকানদার। পরিবারের ৩ ভাই বোনের মধ্যে সামিউল ছিলো সবার ছোট।
মোঃ তারিক মিয়া চট্টগ্রামের জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় অনেক মারামারিতে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলো। তারিকের বাবা পেশায় একজন হোমিও প্যাথি ডাক্তার। পরিবারের ৫ ভাই বোনের মধ্যে তারিখ ছিলো সবার ছোট।
শানিপ শাহিদ “ডট গ্যাং” কিশোর গ্রুপের একজন সদস্য। সে চট্টগ্রামের জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় এই গ্রুপের সাথে থেকে বেল্ট, স্টিক ইত্যাদি দিয়ে মারামারির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলো।
এরুপ কাজের জন্য র্যাব কর্তৃক প্রেফতারের সময় তার মা-বাবা বলেছেন যে তার ছেলে অন্যায় কাজের সাথে লিপ্ত আছেন। শানিপ শাহিদের বাবা ইয়াং ওয়াং কোম্পানীর একজন সিনিয়র ম্যানেজার এবং মা গৃহিণী।
আহনাফ শাহারিয়ার (১৬) “ডট গ্যাং” কিশোর গ্রুপের একজন সদস্য। সে জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় এই গ্রুপের সাথে বিভিন্ন সময় মারামারির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলো। আহনাফের বাবা একজন সিএনজি চালক। পরিবারের ৩ ভাই বোনের মধ্যে সে ছিলো ছোট।
শরিফুল ইসলাম “ডট গ্যাং” কিশোর গ্রুপের একজন। সে জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় এই গ্রুপের সাথে থেকে আনুমানিক ১০ টি মারামারিতে অংশগ্রহণ করেছে। শরিফুলের বাবা পদ্মা অয়েল কোম্পানীতে চাকুরীরত। পরিবারের ৪ ভাই বোনের মধ্যে সে ছিলো সবার ছোট।
আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা সবাই চট্টগ্রামের স্বনামধন্য স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ জন, চট্টগ্রাম মুসলিম সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২ জন এবং নাসিরাবাদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২ জনসহ সর্বমোট ৬ জন ছাত্র।
তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়।
জেএন/এফও/পিআর