পটিয়া থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৪ প্রশিক্ষিত জঙ্গি গ্রেফতার

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র’ আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তথাকথিত হিজরতের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীনে সশস্ত্র প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া ৪ জঙ্গিকে চট্টগ্রামের পটিয়ার বাইপাস থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

- Advertisement -

গ্রেফতারকৃতরা হলেন – হোসাইন আহমদ (২২), নিহাল আব্দুল্লাহ (১৯), আল আমিন (২২) ও আল আমিন প্রকাশ পার্থ কুমার দাস (২১)।

- Advertisement -google news follower

লে: কর্নেল মোহাম্মদ মাহবুব আলম জানান, গ্রেফতারকৃতরা সহপাঠি, নিকটাত্মীয়, স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তি বা বন্ধু বান্ধবের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে। বিভিন্ন সময়ে জামাতুল আনসারের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের উপর নির্যাতন-নিপীড়নের ভিডিও দেখানো, রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করার মাধ্যমে তাদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলত। গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন সময়ে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়।

তথাকথিত হিজরতের প্রথমে তাদেরকে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে রেখে পটুয়াখালী ও ভোলার চর এলাকা, ঢাকা ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শারীরিক কসরত, জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, তাত্তি¡ক ও মনস্তাত্তি¡ক জ্ঞান প্রদান করা হত। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে সমতল হতে পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হয় এবং শুরা সদস্য রাকিব এর মাধ্যমে তারা পার্বত্য অঞ্চলের বাকলাই পাড়া হয়ে কেটিসি পাহাড়ে প্রশিক্ষণ শিবিরে পৌছায়। পার্বত্য অঞ্চলে তারা বিভিন্ন ধরণের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, বোমা তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও প্রতিক‚ল পরিবেশে টিকে থাকা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায়, বিভিন্ন সময় কেএনএফ এর নাথান বম, বাংচুং, রামমোয়, ডিকলিয়ান, পাহল এবং কাকুলীসহ অনেকেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আসত। প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র ও অন্যান্য রসদ তারা অর্থের বিনিময়ে কেএনএফ এর সদস্যদের নিকট হতে সংগ্রহ করত এবং কেএনএফ এর সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে উক্ত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করত বলে জানা যায়। পরবর্তীতে পার্বত্য অঞ্চলে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে তারা সংগঠনের আমীরের নির্দেশে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পার্বত্য অঞ্চলে আত্মগোপন করে। তারা ছোট ছোট গ্রুপে সাইজামপাড়া, মুন্নুয়াম পাড়া, রোয়াংছড়ি, পাইক্ষং পাড়া, তেলাং পাড়াসহ পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে।

- Advertisement -islamibank

গত ৪ দিন আগে তারা সমতলে আসার উদ্দেশ্যে পাহাড়ের গহীন থেকে হেঁটে বান্দরবানের টঙ্কাবতী এলাকায় আসে। পরবর্তীতে সিএনজিযোগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আসার পথে পটিয়া বাইপাস এলাকা থেকে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানকালীন সময়ে আরও ৪-৫ জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারকৃত হোসাইন রাজধানীর একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়ণরত ছিল। সে ২০২১ সালে সিরাজ এর মাধ্যমে এই সংগঠনে যোগদান করে। পরবর্তীতে সিরাজ তাকে সংগঠনের শুরা সদস্য রাকিবের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে সংগঠনের শুরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য বাকলাই পাড়া হয়ে পাহাড়ে কেটিসিতে গমন করে। পাহাড়ে গমনের পর একে-৪৭ সহ বিভিন্ন অস্ত্র চালনা, বোমা প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সামরিক কৌশল বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সে পাশ্ববর্তী দেশের সীমান্তবর্তী রেংক্লাং পাহাড়সহ পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অবস্থান করে। পরবর্তীতে পাহাড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে তারা বিভক্ত হয়ে ছোট একটি গ্রুপে পার্বত্য অঞ্চলে আত্মগোপন করে।

গ্রেফতারকৃত আল আমিন কুমিল্লার একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়ণরত ছিল। সে ২০২১ সালে মাদ্রাসার এক সহপাঠীর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয় এবং পূর্বে গ্রেফতারকৃত ফাহিম এর মাধ্যমে উগ্রবাদ সম্পর্কিত বিভিন্ন বই ও পাশ্ববর্তী দেশে মুসলিম নির্যাতনের ভিডিও কন্টেন্ট দেখে সংগঠনে যোগদান করে। পরবর্তীতে তথা কথিত হিজরতের নামে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে পরিবার থেকে নিরুদ্দেশ হয়। এসময় বিভিন্ন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে থেকে জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে গত ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে সংগঠনের শুরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পাহাড়ে গমন করে। পাহাড়ে আসার পর সে সব ধরণের অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিল।

গ্রেফতারকৃত মোঃ আল আমিন (নওমুসলিম) স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। সে ২০১৮ সালে স্থানীয় এক ইমামের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর সে রাজধানীতে চলে আসে এবং সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরি করা শুরু করে। সে সিরাজের মাধ্যমে সংগঠনটিতে যোগদান করে। পরবর্তীতে ২০২১ সালের নভেম্বরে শূরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে গমন করে। পাহাড়ে আসার পর সে সব ধরণের অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিল।

গ্রেফতারকৃত নিহাল আব্দুল্লাহ এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র ছিল। সে ২০২০ সালের শেষের দিকে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে কুবা মসজিদের পূর্বে গ্রেফতারকৃত ইমাম হাবিবুল্লাহ এর সাথে পরিচয় হয় এবং তার মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই সংগঠনে যোগদান করে। সে গত ২৩ আগস্ট ২০২২ তারিখ তথাকথিত হিজরতের জন্য বাসা থেকে বের হয়। এসময় কুমিল্লা, পটুয়াখালী, সাভার ও চাঁদপুর এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে থেকে জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সে হিজরতে থাকাকালীন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনার উপর তার নেতৃত্বে একটি হামলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল; কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারনে তাদের সেই হামলার পরিকল্পনা নসাৎ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে সংগঠনের শুরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য বাকলাই পাড়া হয়ে কেটিসিতে গমন করে। কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ০৮ তরুণের মধ্যে সে একজন। পাহাড়ে আসার পর সে সব ধরণের অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিল। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

জেএন/এফও/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM