চট্টগ্রামের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অবৈতনিক বিদ্যালয় স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতনের আয়োজনে নগরের টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনি মাঠে দুদিন ব্যাপী স্কুল উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা স্কুল ও অন্যান্য সংগঠনকে সাথে নিয়ে এই উৎসব আয়োজন করা হয়।
শুক্রবার (৪ মার্চ) নগরের টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনী এলাকায় এ উপলক্ষে দুদিন ব্যাপি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের উদ্ধোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ‘জিপিএ ফাইভ’ পাবার দৌঁড়ঝাপ থেকে মুক্তি দিয়ে আনন্দদায়ক শিক্ষার জন্য ‘সিস্টেম পরিবর্তন’ করা হয়েছে। আগে একটা সময় ছিল বাবা মায়েরা এসে আমাকে বলতেন, আমার সন্তান জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। আমার ভালো লাগতো, বলতাম বাহ, জিপিএ-৫! কিন্তু এখন জিপিএ ফাইভ পেয়েছে শুনলে আর ভালো লাগে না, আনন্দ হয় না। কারণ এই জিপিএ-৫ পাবার জন্য শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট করতে হয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্কুলে ক্লাস করতে হয়, এরপর কোচিং করতে হয়। রাতে কোচিং শেষে আবার বাসায় প্রাইভেট পড়তে হয়। প্রাইভেট শেষে আবার স্কুলের পড়া পড়তে হয়। গাইড বই মুখস্ত করতে হয়।
এছাড়াও আয়োজনের চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আবদুল আলিমের সভাপতিত্বে প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. শফিক হায়দার চৌধুরী।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিক্ষা নিশ্চিতে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনী এলাকায় ৩০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল ‘স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতন’ নামক এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামের একদল তরুণের সেই উদ্যোগের পূরণ হয়েছে ৪ বছর। ৩০ শিশুদের নিয়ে শুরু করা স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতনে এখন শিক্ষার্থী ১৫০ জন। তাদের পড়াছেন ৬ জন শিক্ষক। এই শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক পড়াশোনার খরচ বহন করে মূলত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
স্কুল উৎসব আয়োজনের সদস্যসচিব এবং স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহেদুল আলম বলেন, ২০১৯ সালে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত ৩০ জন শিশুদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতন। প্রতিষ্ঠার ৫ বছর পর বর্তমানে রেলওয়ে কলোনি এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ১৫০ জন শিশু এই বিদ্যালয় থেকে নিয়মিত পাঠ নিচ্ছে। পাঠদানের পাশাপাশি সংগঠনের আয়োজনে চালু হয়েছে স্বপ্নবাগিচা ছুটির দিনের পাঠশালা এবং স্বপ্নবাগিচা আরোগ্য নিকেতন। দরিদ্র এবং শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত শিশুদের ধূসর ও মলিন জীবনে উৎসবের আমেজ নিয়ে আসতেই স্কুল উৎসব আয়োজন করা হয়েছে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিলো অগ্নিবীণা পাঠাগার এর সাংস্কৃতিক টিম, স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতন সহ চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের কয়েকটি সুবিধাবঞ্চিত স্কুলের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, এবং দ্বিতীয় দিনে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। সাংস্কৃতিক আয়োজনে উৎসব এর দ্বিতীয় দিন (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় থাকছে বাংলাদেশের ফোক ফিউশন ঘরানার জনপ্রিয় সঙ্গীত দল ‘জলের গান’।
জেএন/হিমেল/এমআর