পাওনা টাকার বিরোধকে কেন্দ্র করে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আব্দুর রহমান ও সিলেটি স্বপন তাদের রুমমেট সালাউদ্দিনকে ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করে। আব্দুর রহমান ও সিলেটি স্বপন সালাউদ্দিনের মানিব্যাগে থাকা ৩৫০ টাকা ভাগ করে নেয়। সালাউদ্দিনের মোবাইল ফোন আব্দুর রহমান নিজের কাছে রাখে। পরে ঘাতকরা চট্টগ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়।
চট্টগ্রামের রেলওয়ে কলোনীর পরিত্যক্ত ১১নং বিল্ডিং এর সামনে ছেনোয়ারা বেগমের টিনশেড ঘরে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার আব্দুর রহমান সিবিআইয়ের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছেন। আজ শনিবার পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট প্রধান পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা এসব তথ্য জানায়।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল অনুমান ৯টায় খুলশী থানাধীন টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনীর পরিত্যক্ত ১১নং বিল্ডিং এর সামনে ছেনোয়ারা বেগম প্রঃ ছেনু এর টিনশেড ভাড়াটিয়াদের ঘরের ভেতর থেকে মোঃ সালাউদ্দিন শেখ (৪৫) এর গলায় জবাইকৃত অবস্থায় অর্ধপচনকৃত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর আভিযানিক দল ৩ মার্চ বিকালে ধানমন্ডি থানাধীন মিনা বাজারের সামনের রাস্তা এলাকা হতে অভিযুক্ত সন্দিগ্ধ আসামী আব্দুর রহমানকে (৩২) গ্রেফতার করে। সে সন্দ্বীপের হরিষপুর এলাকার আলাউদ্দিনের পুত্র।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুর রহমান ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নিহত সালাউদ্দিন, আব্দুর রহমান এবং সিলেটি স্বপন খুলশী থানাধীন টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনীর পরিত্যক্ত ১১নং বিল্ডিং এর সামনে ছেনোয়ারা বেগম প্রঃ ছেনুর টিনশেড ঘরের ভাড়াটিয়া ছিল। প্রথমে সালাউদ্দিন ও সিলেটি স্বপন ওই কক্ষে ভাড়া থাকতো। আব্দুর রহমান টাইগার পাস ঘুরাইন্না গেইট এলাকায় জনৈক দুলালের চা এর দোকানে কাজ করত। উক্ত চা এর দোকানে আসা-যাওয়ার সূত্র ধরে ভিকটিম সালাউদ্দিন ও পলাতক আসামী সিলেটি স্বপনের সাথে আব্দুর রহমানের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে থাকার সমস্যা হওয়ায় আব্দুর রহমান সালাউদ্দিন ও স্বপন একসাথে ওই বাসায় থাকতে শুরু করে।
একই রুমে ভাড়া থাকার সূত্রে ৩ জন একই সাথে হালিশহর আবাহনী মাঠ ও পলোগ্রাউন্ড বাণিজ্য মেলার বিভিন্ন স্টল তৈরির কাজ করে। কাজের মজুরীর টাকা সালাউদ্দিন গ্রহন করত। কাজের বিনিময়ে প্রাপ্ত টাকা সালাউদ্দিন কম বলতো মনে করতেন সিলেটি স্বপন ও আব্দুর রহমান। এই নিয়ে সালাউদ্দিনের সাথে প্রায় ঝগড়া-বিবাদ হত। এরই এক পর্যায়ে স্বপন সালাউদ্দিনের কাছে তার মজুরি বাবদ বকেয়া ৭ হাজার টাকা দাবি করলে সালাউদ্দিন সাড়ে ৩ হাজার টাকা বকেয়া থাকার কথা স্বীকার করে। তার মধ্যে ২ হাজার টাকা পরিশোধ করে। অবশিষ্ট টাকা স্বপনকে পরিশোধ করতে রাজি হলেও স্বপন তা মানতে চায়নি। যার ফলে বিরোধ আরো প্রকট আকার ধারণ করে। পরিকল্পনা মোতাবেক তারা একটি ধারালো ছুরি কিনে। ২৪ ফেব্রুয়ারি স্বপন ও আব্দুর রহমান কাজে না গিয়ে বাসায় অবস্থান করছিল। রাত সাড়ে ১০ টায় সালাউদ্দিন কাজ শেষে বাসায় ফিরে আসে এবং কিছুক্ষণ মোবাইল ফোন দেখে ঘুমিয়ে পড়ে। আব্দুর রহমান ও স্বপন কিছুক্ষণ ছক্কা খেলে তারাও ঘুমিয়ে পড়ে।
পরিকল্পনা মতে রাত ১টার দিকে স্বপন ঘুম থেকে উঠে আব্দুর রহমানকেও জাগিয়ে তোলে। স্বপন প্রথমে ছুরি দিয়ে ঘুমন্ত সালাউদ্দিনের গলায় আঘাত করে এবং আব্দুর রহমান দুই হাত চেপে ধরে। আঘাতের তীব্রতায় সালাউদ্দিনের দেহ নিস্তেজ হলে তারা গামছা দিয়ে সালাউদ্দিনের দুই হাত বাধে। এক পর্যায়ে তার মৃত্যু হয়। পরে তারা রুমের দরজা বন্ধ করে রিক্সা করে অলংকার যায়। তারা অলংকার থেকে বাসে করে ফেনী যায় এবং ফেনী থেকে সিলেট যায়। সিলেট থেকে তারা উভয়ে নরসিংদীর মালদ্বীপ যায়। সেখানে আসামী সিলেটি স্বপন কাজের জন্য থেকে যায় এবং আসামী আব্দুর রহমান নারায়নগঞ্জে তার মামার বাসায় যায়। সেখানে আব্দুর রহমান একদিন থেকে কুমিল্লা চাঁন্দিনায় তার শ্বশুর বাসায় যায়। পরবর্তীতে পুলিশি অভিযানের মুখে আব্দুর রহমান পালিয়ে ঢাকা ধানমন্ডি তার স্ত্রীর কাছে চলে যায়।
জেএন/এফও/এমআর