সারাদেশে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সেইসঙ্গে সংলাপের ফলাফল নিয়ে কৌতূহল। কেমন হবে আগামী নির্বাচন। সবার একটাই প্রশ্ন নির্বাচন হবে তো! হলে বিএনপি আসবে তো! দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন এরূপ, তখন ২০ দলীয় জোটে বিএনপির সঙ্গী জামায়াত কষছে নতুন হিসাব। কারণ, দেশি-বিদেশি চাপে জামায়াতকে বাদ দিতে বিএনপির উপর চাপ বাড়ছে। এ অবস্থায় বিএনপিও জামায়াতকে এড়িয়ে চলেছে।
রাজনীতির মাঠে অনেকদিন নীরবতার পর এবার সারাদেশে আন্দোলনের নামে নাশকতার ছক কষছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি জামায়াত বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা দেখে তারা মাঠে নামবে বলে জানা গেছে। সরকারের বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা রিপোর্টেও জামায়াতের নাশকতার ছকের আভাস মিলেছে বলে একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, সাতকানিয়া, রাজশাহী, নওগাঁ, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, বরিশালের পটুয়াখালীসহ যেসব জায়গায় জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে, সেখানে তারা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। শুধু তা-ই নয়, ভদ্র বেশে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে হামলার কৌশল ও ছক কষছে তারা। যে কোনো সময় আন্দোলনের ঘোষণা আসলেই ভয়ংকর রূপে জামায়াত সারাদেশে একযোগে নাশকতা চালাতে পারে। তবে কবে কখন কিভাবে তারা আন্দোলনে নামবে সেটা জানা যায়নি। পরিস্থিতি বিবেচনায় আন্দোলনের নামে সহিংসতা করতে পারে জামায়াত শিবির। তবে সবকিছু নির্ভর করছে বিএনপি তাদের (জামায়াতের) ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেয়, তার উপর।
গত ২৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করে দেওয়ার পর তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। একটি সুত্র জানিয়েছে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত হওয়ার পর বিএনপি এখন বেশ চাঙ্গা। এ কারণে তাদের ইমেজও বেড়েছে বেশ। শুধু তাই নয়, ড. কামাল হোসেনের জোটে জামায়াতকে রাখা যাবে না- বিএনপিকে এমন অঙ্গীকার করানোর পর জামায়াতের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বিএনপিও এখন নানা অজুহাতে জামায়াতকে এড়িয়ে চলেছে। বিগত ১৫ দিনে বিএনপির কোনো শীর্ষ নেতা জামায়াতের কোনো নেতার সঙ্গে খুব একটা ভালো আচরণ না করায় তারা ক্ষুব্ধ।
জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এটা একটা কৌশল। বিএনপি জামায়াতকে বাদ দিলে তারাই বিপদে পড়বে। আর বিএনপির কৌশলেই জামায়াত দূরে থাকছে।
একাধিক সূত্র বলেছে, জামায়াত এবার মরণ কামড়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের যদি ২০ দল থেকে বাদ দেওয়া হয়, তবে তারা দেশব্যাপী সহিংস আন্দোলন করবে। বিএনপি বিশ্বাসঘাতকতা করলে তারা কোনো ছাড় দেবে না।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জয়নিউজকে বলেন, প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এখন আর কিছুই করার নেই কমিশনের।
তিনি বলেন, এখন থেকে দেশের আর কোনো নির্বাচনে সরাসরি দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না দলটি। কারণ, ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর আপিল করে জামায়াতে ইসলামী। বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকায় তখন নির্বাচন কমিশন থেকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। আদালতে অনেক কর্মদিবস শুনানির পর পূর্ণাঙ্গ আদেশ হাতে পাওয়ার পর আমরা আদালতের আদেশ মেনে নিবন্ধন বাতিল করেছি।
তবে তিনি জানান, বিষয়টি এখনো আপিল বিভাগে আছে। হাইকোর্টের রায়ের ওপর আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ না দেওয়ায় নিবন্ধন বাতিলের এই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে ইসি আদালতের আদেশ পালন করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে কথা হয় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য আলী আহাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আপিলে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করেছে, যা আইনসম্মত নয়। আমরা আন্দোলন করব, আইনিভাবে মোকাবেলাও করবো। তবে তিনি সহিংস আন্দোলন কিংবা রণ প্রস্তুতির খবরকে মিথ্যা বলে জানান।
তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অধীনে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার পর ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দিয়েছিলো নির্বাচন কমিশন। পূর্ণাঙ্গ রায় আসার আগেই নিবন্ধন বাতিল করা উচিত হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা সজাগ আছি। কেউ কোনো নাশকতা করতে পারবে না। সারাদেশের পাশাপাশি রাজধানীতেও টহল জোরদার করা হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনী প্রস্তুত।
জয়নিউজ/আরসি