চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে গাজীপুরে দুটি মামলা হয়েছে। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। আজ শুক্রবার রাতে বাসন থানার এসআই রোকন মিয়া বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এছাড়া জমি দখলের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে হুকুমের আসামি করে আরও একটি মামলা করেন স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চিত্রনায়িকা মিথ্যা বলে মানুষের সহানুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ করেছেন তিনি। তারা পুলিশকে বিতর্কিত করার মিশনে নেমেছেন। অথচ মাহী বা তার স্বামী জমিজমা সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসেননি। আজ যাদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন, তাদেরও আমি চিনি না। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার ভোরে বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুপক্ষই পালিয়ে যায়। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটে। ইসমাইল হোসেনসহ তার পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে আহত ইসমাইল বাদী হয়ে ২৮ জনের বিরুদ্ধে বাসন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
এর আগে, শুক্রবার ভোরে স্বামীর সঙ্গে ওমরাহ পালন করতে যাওয়া চিত্রনায়িকা মাহী সৌদি আরবের মক্কা শহর থেকে ফেসবুক লাইভে রকিবের গাড়ির শো-রুম ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগ করেন।
এ সময় তিনি দাবি করেন, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ নামে তার স্বামীর একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে। সেই শোরুমে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা তার শোরুমের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা শোরুমের বিভিন্ন আসবাব, দরজা-জানালার কাচ, টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করেছে। শোরুমের সাইনবোর্ডও খুলে ফেলেছে। দুর্বৃত্তরা তার অফিসকক্ষ তছনছ করে টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে গেছে।
ইসমাইল হোসেন ওরফে লাদেন ও মামুন সরকারের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন মাহি।
ফেসবুকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ঘুষ’ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন মাহী। পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য অভিযোগে মাহিয়া মাহী ও তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ।
মাহীর ফেসবুক লাইভের পর সংবাদ সম্মেলন করেন স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, রকিব সরকার তার প্রায় সোয়া ১১ শতাংশ জমি দখল করে গাড়ির শো-রুম করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের তিনি এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি মীমাংসার জন্য দফায় দফায় চেষ্টাও করা হয়। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে নতুন কিছু গাড়ি রকিব সরকারের লোকজন ওই শো-রুমে উঠাতে থাকে।
ইসমাইল বলেন, ‘খবর পেয়ে সেখানে আমিসহ কয়েকজন হাজির হই। এ সময় দেশীয় অস্ত্রসহ রকিব সরকারের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালান। নিজেরাই নিজেদের শো-রুম ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় আমিসহ ৬ জন লোক আহত হই। ওই জমি রকিব সরকারের নয়।
তিনি আরও বলেন, জমি ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে রাকিব সরকার আমার কাছে এক কোটি টাকা দাবি করেছিলেন। যেখানে এক কোটি টাকা দিলে সমস্যা সমাধান হয়, সেখানে কেন আমি পুলিশকে দেড় কোটি টাকা দেব? পুলিশ আমার পক্ষে থাকলে আজ কেন আমি মার খেলাম? কেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দিলাম ? মেট্রোপলিটন পুলিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই রকিব তার স্ত্রী চিত্রনায়িকা মাহীকে ব্যবহার করছেন।
জেএন/এমআর