চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার বহুতল একাধিক মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডে গাড়ি পার্কিংয়ের কোন ব্যবস্থা নেই। কোন কোন মার্কেটে স্পেস থাকলেও তা অধিক মুনাফার লোভে ভাড়া দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ফলে এসব ভবন একদিকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে মার্কেটে পাকিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় আগত ক্রেতারা তাদের গাড়ি রাস্তার উপর রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে পটিয়া শহিদ ছবুর রোড, স্টেশন রোড, ক্লাবরোডের যানজট এখন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে শহিদ ছবুর রোডে গিয়ে দেখা যায়, এনজে শপিং কমপ্লেক্সের আন্ডারগ্রাউন্ডে যেখানে গাড়ি পাকিংয়ের জন্য রাখা হয়েছে সেখানে এখন একাধিক দোকান। অগ্নিকান্ড বা ভূমিকম্পের মত কোন দূর্ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে বের হওয়ার কোন জায়াগা নেই।
একদিকে গাড়ির প্রবেশের পথ, অপরদিকে গাড়ি নির্গমনের পথেও দোকান ভাড়া দিয়েছে মালিক পক্ষ। ভেতর থেকে বাতাস বের হওয়ার কোন ভেন্টিলেশন নেই। প্রতিটি দোকানে এসি চলছে। বিদ্যুত গেলে কবরের অন্ধকার নেমে আসে। ফলে দোকানদের হাইভোল্টেজ জেনারেটর চালাতে হয়।
সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকন্ডে ব্যাপক প্রাণহানির বিষয়টির কারণে পটিয়ার এধরণের স্থাপনা নিয়েও উদ্বেগে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পটিয়া স্টেশন রোডের আল্লামা টাওয়ারের নিচেও দোকান দেয়া হয়েছে। এছাড়া আলম প্লাজার সামনে পাকিংয়ের জায়গায় অস্থায়ী দোকান রয়েছে।
মার্কেটগুলোর কিছু ফ্লোরে বানিজ্যিক ব্যাংকের শাখা রয়েছে। গত বছর ইসলামি ব্যাংকের পাশের দোকানে আগুন লাগলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এসব মার্কেটে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থাও নেই।
বিষয়টি নিয়ে পটিয়া পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বাবুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, মার্কেট মালিকদের একাধিকবার লিখিত ও মৌখিক সতর্কতা দেয়া হয়েছে।
পৌরসভার নকশার বাইরে কিভাবে গাড়ি পাকিংয়ের স্পেসে দোকান বরাদ্দ দেয়া হলো সেটা বলতে পারেননি পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।
উপ সহকারি প্রকৌশলী জানিয়েছেন যারা পাকিং প্লেসে দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন সে সব মার্কেট মালিকদের নোটিশ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ আছে স্থানীয় কাউন্সিলর ও পৌরসভার অসাধু কর্মকর্তারা মার্কেটগুলো থেকে এককালীন এবং মাসিক মাসোয়ারা নিয়ে গাড়ি পাকিংয়ের স্থানে দোকান বরাদ্দে সহযোগিতা করেছেন।
তবে এই অভিযোগ তারা অস্বীকার করে মার্কেট মালিকদের বার বার নোটিশ দেয়া হলেও তারা কর্ণপাত করছেনা বললেন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
পৌরসভা আইনে নির্মান কাজে নকশা অনুসরণ না করলে সেটি পৌরসভা ভেঙ্গে দিতে পারে। কিন্তু বছরের পর বছর পটিয়ার বেশ কয়েকটি বহুতল শপিং কমপ্লেক্সের আন্ডারগ্রাউন্ড গাড়ি পাকিংয়ের জায়গায় এখন দোকান চলছে।
পটিয়া ক্লাব রোডের পটিয়া টাওয়ার, স্টেশন রোডের মহানগরীতে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে অরাজক অবস্থা তৈরি হয়েছে। সড়কে তীব্র যানজট ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে ব্যক্তিগত গাড়ি যেখানে সেখানে পার্কিংয়ের ফলে যানজট তৈরি হচ্ছে।
রেস্টুরেন্ট, মার্কেট ও ভবন মালিকরা তাদের নির্দিষ্ট পার্কিংস্থান বন্ধ করে সড়কে গাড়ি রাখছে। এতে সড়কজুড়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারী।
পটিয়া ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক হাসান হাবীব জানিয়েছেন, পৌরসভার ফুটপাত দোকানরা দখল করে নেয়ায় পথচারিরা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে যানজট এবং দূর্ঘটনা বাড়ছে।
পটিয়া পৌরসভা ২ বছর আগে পৌরসভার পানি নিস্কাশনের জন্য প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মান করে। এই ড্রেনের স্লাবের উপর টাইলস বসিয়ে পথচারীদের চলাচলের রাস্তা তৈরি করে। বর্তমানে এই রাস্তা দখল করে নিয়েছে দোকানদাররা। তারা তাদের দোকানের মালামাল ড্রেনের উপর সাজিয়ে রেখে পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
পটিয়া ছন্দা সিনেমা হল থেকে মুন্সেফ বাজার, শহিদ ছবুর রোড, স্টেশন রোড, ডাকবাংলা থেকে বাস স্টেশন রোডের ফুটপাত পুরোটাই দোকানদের দখলে।
এ বিষয়ে পৌরসভার মেয়রের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৌরসভার নিজস্ব কোন ম্যাজিস্ট্রেট নেই। প্রশাসন থেকে মাঝে মাঝে পাওয়া গেলেও সব সময় মোবাইল কোর্ট না থাকায় লোভী দোকানদাররা ফুটপাত দখল করে নেয়। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
জেএন/পিআর